ডিজিটাল টাস্কফোর্স-বেলা যে যায় ...

বিগত নির্বাচনের আগে যেসব কারণে আওয়ামী লীগ তরুণ ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ বা সমর্থন অর্জন করতে পেরেছিল, তার অন্যতম ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার। নির্বাচনী ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রাধিকার ও এ সম্পর্কিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা থাকায় সবাই ধারণা করেছিল বর্তমান সরকারের হাত ধরেই দেশ ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে সওয়ার হবে।


ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারের কিছু উদ্যোগ সুফল এনেছে ঠিকই, কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণে সেগুলো অপ্রতুল বলেই অনুভূত হয়েছে। এ কাজে সরকারের উদ্যম ও উদ্যোগে যে ঘাটতি আছে তা বোঝার জন্য শনিবারের সমকালে প্রকাশিত একটি খবরই যথেষ্ট। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সুদূরপ্রসারী নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল সরকারের মেয়াদের শুরুতে। এই টাস্কফোর্সকে সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত একটি স্টিয়ারিং কমিটি ২০১০ সালে প্রথম ও একমাত্র বৈঠকও করেছিল। কিন্তু ওই বৈঠক পর্যন্তই টাস্কফোর্সের কাজ সীমাবদ্ধ রয়েছে। দুই বছরের ব্যবধানে বর্তমান মুখ্য সচিব পর্যন্ত ওই টাস্কফোর্সের কথা বিস্মৃত হয়েছেন। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। আর টাস্কফোর্সের কথা যখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই ভুলে থাকেন তখন এটি কতটা কার্যকর হয়েছে বা হবে, তা সহজেই বলে দেওয়া সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও এ খাতের গুণগ্রাহীরা স্বভাবতই টাস্কফোর্সের কাছে অনেক কিছুই আশা করেছিলেন। প্রথম বৈঠকে কিছু প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনাও এসেছিল। কিন্তু এখন ভবিষ্যতের আশাবাদই শুধু অবশিষ্ট আছে। প্রথম বৈঠকে যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠনের কথা উঠেছিল। ব্যান্ডউইথের দাম কমানো, কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণসহ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার সেবা পেঁৗছানোর কথা বলা হয়েছিল। ব্যান্ডউইথের দাম কমানো বা সফটওয়্যার পার্কের জন্য জনতা টাওয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়তো কঠিন কিছু নয়। সরকার চাইলে দ্রুত এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। আমরা আশা করব, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা হবে। অন্য সময়সাপেক্ষ উদ্যোগগুলোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশে একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট গড়া প্রয়োজন। শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইনস্টিটিউট গড়ার কাজে দ্রুত অগ্রসর হওয়া দরকার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকে অবারিত করাও অবশ্য কর্তব্য হয়ে উঠেছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের আউটসোর্সিং সুবিধা বৃদ্ধি ও অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য চালু করতে এর বিকল্প নেই। ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর পাশাপাশি, বিটিসিএলের মাধ্যমে দ্রুতগতিসম্পন্ন সুলভ ইন্টারনেট সেবা সবার মাঝে পেঁৗছানো দরকার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে সুলভ ও গতিশীল ইন্টারনেট পেঁৗছাতে না পারলে এ খাতে সমতা আসবে না। বস্তুত, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সার্বিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সই উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে পারে। ফলে টাস্কফোর্স গঠনের চিন্তা ছিল বিজ্ঞজনোচিত। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় একটি টাস্কফোর্সের কথাই যদি সবাই ভুলে যান, তবে তা হতাশাজনক। আমরা মনে করি, দ্রুত ডিজিটাল টাস্কফোর্স পুনর্জীবিত হোক। অনেক সময় চলে গেছে, কিন্তু সামনে কম সময় নেই। এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্লোগান তরুণ প্রজন্মকে তাড়িত করেছিল, সে পথে এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে।ডিজিটাল টাস্কফোর্স
বেলা যে যায় ...
বিগত নির্বাচনের আগে যেসব কারণে আওয়ামী লীগ তরুণ ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ বা সমর্থন অর্জন করতে পেরেছিল, তার অন্যতম ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার। নির্বাচনী ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রাধিকার ও এ সম্পর্কিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথা থাকায় সবাই ধারণা করেছিল বর্তমান সরকারের হাত ধরেই দেশ ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে সওয়ার হবে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সরকারের কিছু উদ্যোগ সুফল এনেছে ঠিকই, কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণে সেগুলো অপ্রতুল বলেই অনুভূত হয়েছে। এ কাজে সরকারের উদ্যম ও উদ্যোগে যে ঘাটতি আছে তা বোঝার জন্য শনিবারের সমকালে প্রকাশিত একটি খবরই যথেষ্ট। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সুদূরপ্রসারী নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল সরকারের মেয়াদের শুরুতে। এই টাস্কফোর্সকে সহায়তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত একটি স্টিয়ারিং কমিটি ২০১০ সালে প্রথম ও একমাত্র বৈঠকও করেছিল। কিন্তু ওই বৈঠক পর্যন্তই টাস্কফোর্সের কাজ সীমাবদ্ধ রয়েছে। দুই বছরের ব্যবধানে বর্তমান মুখ্য সচিব পর্যন্ত ওই টাস্কফোর্সের কথা বিস্মৃত হয়েছেন। দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। আর টাস্কফোর্সের কথা যখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই ভুলে থাকেন তখন এটি কতটা কার্যকর হয়েছে বা হবে, তা সহজেই বলে দেওয়া সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও এ খাতের গুণগ্রাহীরা স্বভাবতই টাস্কফোর্সের কাছে অনেক কিছুই আশা করেছিলেন। প্রথম বৈঠকে কিছু প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনাও এসেছিল। কিন্তু এখন ভবিষ্যতের আশাবাদই শুধু অবশিষ্ট আছে। প্রথম বৈঠকে যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠনের কথা উঠেছিল। ব্যান্ডউইথের দাম কমানো, কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণসহ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার সেবা পেঁৗছানোর কথা বলা হয়েছিল। ব্যান্ডউইথের দাম কমানো বা সফটওয়্যার পার্কের জন্য জনতা টাওয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়তো কঠিন কিছু নয়। সরকার চাইলে দ্রুত এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। আমরা আশা করব, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করা হবে। অন্য সময়সাপেক্ষ উদ্যোগগুলোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশে একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট গড়া প্রয়োজন। শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইনস্টিটিউট গড়ার কাজে দ্রুত অগ্রসর হওয়া দরকার। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাকে অবারিত করাও অবশ্য কর্তব্য হয়ে উঠেছে। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের আউটসোর্সিং সুবিধা বৃদ্ধি ও অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্য চালু করতে এর বিকল্প নেই। ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর পাশাপাশি, বিটিসিএলের মাধ্যমে দ্রুতগতিসম্পন্ন সুলভ ইন্টারনেট সেবা সবার মাঝে পেঁৗছানো দরকার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে সুলভ ও গতিশীল ইন্টারনেট পেঁৗছাতে না পারলে এ খাতে সমতা আসবে না। বস্তুত, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সার্বিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্সই উপযুক্ত নির্দেশনা দিতে পারে। ফলে টাস্কফোর্স গঠনের চিন্তা ছিল বিজ্ঞজনোচিত। কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় একটি টাস্কফোর্সের কথাই যদি সবাই ভুলে যান, তবে তা হতাশাজনক। আমরা মনে করি, দ্রুত ডিজিটাল টাস্কফোর্স পুনর্জীবিত হোক। অনেক সময় চলে গেছে, কিন্তু সামনে কম সময় নেই। এ সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্লোগান তরুণ প্রজন্মকে তাড়িত করেছিল, সে পথে এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে।

No comments

Powered by Blogger.