‘ইশকুল পালানো’ শিক্ষকেরা

বিশ্বের ‘সুপার পাওয়ার’ নামক মর্যাদার গন্তব্যে পৌঁছাতে দেশের তরুণ সমাজকেই ভারতের ‘টিকিট’ মনে করা হয়। অথচ এই তরুণ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হাতেখড়ি যেখানে, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই রয়েছে বড় ধরনের গলদ। সর্বশেষ একটি জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, যেকোনো কার্যদিবসে দেশটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি চারজন শিক্ষকের মধ্যে


একজন অনুপস্থিত থাকেন। এটিকে ভারতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এক বিরাট বাধা হিসেবে মনে করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্তিক মুরালিধরনের নেতৃত্বাধীন গবেষণায় শিক্ষকদের এই ‘ইশকুল পালানো’র বিষয়টি উঠে আসে।
ভারতের দারিদ্র্যপীড়িত কৃষিনির্ভর রাজ্য উত্তর প্রদেশ। প্রায় ২০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই প্রদেশের বাঘপাত জেলার শিক্ষকদের অনুপস্থিতির প্রভাব পড়ছে স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী, এমনকি সহকর্মী অন্য শিক্ষকদের ওপরও। সেখানকার একটি স্কুলের হতাশ এক প্রধান শিক্ষিকা তাঁর সহকর্মীদের হাজিরার রেজিস্টার দেখান। সেখানে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সাতজন নিয়মিত শিক্ষকের মধ্যে দুজন ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থেকেছেন। একজন শারীরিক অসুস্থতা ও সন্তান লালন-পালনের নামে এত ছুটি নিয়েছেন যে বছরজুড়ে খুব কম সময়ই তাঁকে স্কুলে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রধান শিক্ষিকা অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেক শিক্ষক কাজ করতে চান না। সরকার সব শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে বইপত্র, স্কুলের পোশাক ও দুপুরের খাবার দিচ্ছে। তারা প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করছে। কিন্তু শিক্ষকেরা নিবেদিত না হলে এই অর্থের সবই জলে ঢালা হবে।’ ওই এলাকার অন্যান্য স্কুলের চিত্র প্রায় একই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের আজকের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যতের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করে রাখছে।
অনুপস্থিতির চিত্র: ২০০৩ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ভারতের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় গড়ে ২৫ শতাংশ শিক্ষক কোনো এক সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১০ সালে পুনরায় পরিচালিত জরিপে এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়ে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে উত্তর প্রদেশে এই হার তখনো ৩০ শতাংশের বেশি ছিল। এর মধ্যে কিছু অনুপস্থিতি ছিল অসুস্থতা, মাতৃত্বকালীন বা সন্তান লালন-পালন ইত্যাদি বৈধ কারণে। তবে আনুমানিক ৬০ শতাংশ অনুপস্থিতির কারণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.