আবিদুর রেজা খান- শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সুহৃদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সুপ্রিমকোর্টের খ্যাতিমান আইনজীবী, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আবিদুর রেজা খানের মৃত্যুবাষির্কী। তাঁর সুদীর্ঘ ৮০ বছরের জীবনে তিনটি ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেনÑরাজনীতি, আইন ব্যবসা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজ।
এই তিনটি ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্য পেয়েছিলেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। আবিদুর রেজা খানের জন্ম ১৯২৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার দিগর মহিষখালী গ্রামে। ১৯৪৪ সালে ডামুড্যা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকেই আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৪৬ সালে রাজেন্দ্র কলেজে পড়ার সময়ে বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে আসেন এবং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ফরিদপুর জেলার মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সৃষ্টি হয় এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। অতঃপর তিনি আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে ঢাকা বারে যোগদান করেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি আইনের ভুবনে বিচরণ করেছেন। বাংলাদেশের হাইকোর্টের একজন প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে মূল্যবান অবদান রেখে গেছেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতিতে যোগদান করে স্বীয় কর্মদক্ষতা, মেধা ও গণমুখী ভূমিকার কারণে দু’বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের মুক্ত করার জন্য আইনি লড়াইয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ সদস্য ও পরবর্তীতে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি নিজেকে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবিদুর রেজা খানকে খুব স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আবিদুর রেজার কেবল চেহারা, অবয়ব এবং বেশভুষাগত মিলই ছিল না, মিল ছিল রাজনৈতিক মতাদর্শের ক্ষেত্রে। এমনকি জীবনদর্শনের ক্ষেত্রেও। দু’জনই জন্মেছিলেন সচ্ছল বাঙালী মধ্যবিত্ত পরিবারে। ধর্মীয় চিন্তা চেতনায় দু’জনই ছিলেন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। মানুষের সেবা ছিল তার জীবনের ব্রত। এলাকার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা তার দানে ধন্য হয়েছে। আর্তের সেবায় তিনি দান করেছেন অকৃপণ হস্তে। হাজী মোহাম্মদ শরীয়তুল্লাহ কলেজের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। হাইকোর্টের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী হিসেবে তিনি উপার্জন করেছিলেন অর্থকড়ি। কিন্তু মানব সেবা, দরিদ্র মানুষের এবং পরিচিত জনদের সাহায্য করতে গিয়ে সেই উপার্জিত অর্থকড়ি ব্যয় করেছিলেন দু’হাতে। জাতীয় রাজনৈতিক পরিম-ল অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখে গেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি সরকারী প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ইতালি ও সুইজারল্যান্ড সফর করেন। তিনি বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী সমিতির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ইরাক মৈত্রী সমিতির সভাপতি এবং আন্তঃপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বাংলাদেশ অধ্যায়ের সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মরহুম আবিদুর রেজা খান আজ নেই। আজ ৩ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুবাষির্কী। তবে একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ, খাঁটি দেশপ্রেমিক, সমাজসেবক ও নিষ্ঠাবান আইনজীবী হিসেবে তিনি বেঁচে থাকবেন আগামী প্রজন্মের কাছে।

এ্যাডভোকেট ফজলুল হক চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.