রেলমন্ত্রীর চপেটাঘাত-সংযত আচরণই কাম্য

অঘটন একটা ঘটিয়ে ফেলেছেন রেলমন্ত্রী। সাধারণ মানুষ কাজটি করলে হয়তো সেটাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া হতো। কিন্তু ওবায়দুল কাদের একজন মন্ত্রী, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তিনি সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করতে পারেন না। তাঁর কাছ থেকে সংযত আচরণই কাম্য।


সরকারের একটি নাজুক পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর গ্রহণযোগ্যতা তখন প্রশ্নের মুখে। দেশের অনেক সড়ক, মহাসড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজ নিয়েও অসন্তোষ চরমে। এমন একটি অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথম দিনেই তিনি সংবাদ মাধ্যমের নজর কাড়েন। প্রথম দিন থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েন ওবায়দুল কাদের। প্রতিবছর ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এবার ঈদে অনেকটাই নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরেছে মানুষ। একজন মন্ত্রীর রাস্তাঘাটে এভাবে ঘুরে বেড়ানোকে সমালোচকরা ভালো দৃষ্টিতে হয়তো দেখেননি। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের তাঁর কাজের ভেতর দিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কাড়েন। একটি দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছিলেন বলেই ধারণা করা যেতে পারে।
সরকারের আরেকটি নাজুক পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদেরকে দেওয়া হয় রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। রেলমন্ত্রী হিসেবেও ওবায়দুল কাদের তাঁর দায়িত্বশীলতা ও যোগ্যতার পরিচয় দেন। এ কথা সবারই জানা, রেলওয়ের মতো একটি সম্ভাবনাময় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনেকটাই গলা টিপে মেরে ফেলার জোগাড় করা হচ্ছিল। যখন সারা পৃথিবীতে রেলওয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে রেলওয়েকে অজনপ্রিয় করার সব ব্যবস্থাই করা হচ্ছিল। দেশের অনেক রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক রেলপথ। অনেক রুট তুলে দেওয়া হয়েছে। রেলের টিকিট কালোবাজারি তো অত্যন্ত পরিচিত একটি ব্যাপার। রেলের জমি রীতিমতো লুট করা হয়েছে। অবৈধ দখলে চলে গেছে রেলওয়ের সম্পত্তি। মন্ত্রী নিজেও সে কথা বলেছেন। তাঁর মুখ থেকেই উচ্চারিত হয়েছে, 'রেল দুর্নীতিতে ভরে গেছে। রেলের স্লিপার ও তেল চুরি হয়। টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে। সব লুটেপুটে খাচ্ছে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা রেলকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছে।' তিনি এটাও জানিয়েছেন, রেলের দুর্নীতির তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে কাজে লাগানো হবে। পাকশী রেল বিভাগের এক হাজার ৮৫০ একর জমির মধ্যে ১১৩ একর রেলের দখলে রয়েছে। বাকি জমি বেদখল হয়ে গেছে। এই বেদখল সম্পত্তি এক মাসের মধ্যে পুনর্দখল করা হবে- এমন কথাও বলেছেন তিনি। কিন্তু ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মীর সঙ্গে তিনি যে আচরণ করেছেন, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। মহানন্দা এঙ্প্রেসের এক এফআইকে চপেটাঘাত করেছেন তিনি। মন্ত্রী হিসেবেই শুধু নন, একজন রাজনীতিক হিসেবেও এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রাখতে পারেননি। ওই রেলকর্মীর বিরুদ্ধে জনৈক যাত্রীর অভিযোগের এমন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অন্তত একজন মন্ত্রী শুধু নন, একজন রাজনীতিকের কাছ থেকেও কাম্য নয়।
শুরুতেই বলা হয়েছে, মন্ত্রী হিসেবে অনেক পরে সরকারে অন্তর্ভুক্ত হলেও ওবায়দুল কাদের দৃষ্টান্তমূলক অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তাঁর সব অর্জন মুছে দেয়, এমন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা উচিত হবে না। সবার কাছ থেকেই সংযত আচরণ আশা করব আমরা।

No comments

Powered by Blogger.