চ্যালেঞ্জিং সময়ে যোগাযোগ ও রেলের এক মন্ত্রী by সমুদ্র হক

চ্যালেঞ্জিং সময়ে যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তা সাধারণের নজর কেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে গ্রামের লোকও তা জানতে পারছে। ‘সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য পথের মন্ত্রী পথেই নেমে ভূমিকম্প ধরিয়ে দিয়েছেন কর্মকর্তাদের, ‘এই না হলে মন্ত্রী!’ এমন মন্তব্য ও আলোচনা এখন মাঠ পর্যায়ে।


মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যেভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে রাস্তাঘাট দেখে বেড়াচ্ছেন তাতে ওইসব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ হাড়ে হাড়ে টের পারছেন কত ধানে কত চাল। বুঝতে পারছেন কাজ না করে সরকারী অর্থ শ্রাদ্ধের দিন আর রইল না। মন্ত্রীরও সাফ কথা, অসৎ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী যত বড় রথী মহারথী হোক তাদের ছাড়বেন না। অবৈধ পথে কে কত সম্পত্তির মালিক হয়েছে তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিয়ে তদন্ত করিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এসব কথা শুনে লোকজন বলছেন, এবার যদি কালো বিড়াল বধ করতে পারেন তাহলে সাধারন মানুষের মনে গেঁথে যাবেন। মন্ত্রীও বলছেন, মানুষ কাজ দেখতে চায়। এই সময়টায় দেশের পথঘাট দেখলেই বোঝা যায় কাজ কতটা হচ্ছে। উদাহরণ দেয়া যাক- বগুড়া জেলার সড়ক মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায় সাধ্যের মধ্যে সবই ঠিকঠাক হচ্ছে। পথের এবড়ো খেবড়ো অংশগুলো ভরাট করে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। কোথাও দ্রুত পেভমেন্টের কাজ হয়েছে। ঠেকা কাজ পাড়ি দিয়ে কোন রকমে যেমন তেমন সংস্কার করে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীগণ সরকারী অর্থ যেভাবে ভাগবাটোয়ারার মহোৎসব শুরু করেছিলেন তা আর পারা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে কাজ না করেই বিল তোলা হতো। এখন তা আর নেই। বগুড়া অঞ্চলের রাস্তা ঘুরে ও এলাকার লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাসে অন্তত দু’বার করে রাস্তাঘাটের সকল প্রকৌশলীকে মাঠে দেখা যায়। সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা টু দ্য পয়েন্টে দেখা হয় । কোন অভিযোগ আসার সঙ্গেই কাল বিলম্ব না করে দরকার হলে রাতেও রওনা দেন কর্মকর্তারা। যেভাবেই হোক কাজ করতেই হবে এমন মনোভাব গড়ে উঠেছে তাদের। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার যোগাযোগ এবং রেলমন্ত্রীর নওগাঁ জয়পুরহাট সান্তাহার সফরের সময় তটস্থ হয়ে অপেক্ষা করছিলেন বগুড়ার সড়ক ও রেল বিভাগের কর্মকর্তাগণ। স্টেশন মাস্টারকে একজন বললেন ‘মন্ত্রী মনে হয় বগুড়া আসবেন না।’ স্টেশন মাস্টারের তাৎক্ষণিক চড়া কণ্ঠ ‘যান ঠিকমতো কাজ করেন।’ ওই দিন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীদের দেখে মনে হচ্ছিল কতটা ‘এফিসিয়েন্ট’ তারা। দর্শনার্থীদের কথা শুনছিলেন আন্তরিকতার সঙ্গে। খোঁজখবর নিচ্ছিলেন কোন রাস্তার ত্রুটি আছে কিনা। মেরামতের সব কিছুই যেন রেডি। বলা মাত্রই যুদ্ধাবস্থার মতো ছুটে যাবে তারা। (অবশ্য এর মধ্যেই অনেকে মোবাইল ফোনে খোঁজ করছিলেন মন্ত্রী সান্তাহার থেকে কোন্ পথে কোথায় যাচ্ছেন। যেন আতঙ্ক কাটে না। মন্ত্রীর গাড়ি কখন কোন্ দিকে ঘুরবে তা কেউ জানে না।) রেল বিভাগের দুর্নীতি যে কতটা প্রকট তা মন্ত্রী পরিষ্কার দেখতে পারছেন। পাকশী থেকে সান্তাহার। সেখান থেকে বগুড়া হয়ে লালমনিরহাট পর্যন্ত রেলপথের দুই ধারে বহু জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। বগুড়া রেল স্টেশন থেকে পূর্ব দিকের রেলপথের অনেকটা জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। মাস তিনেক আগে এক নম্বর রেল গেটের কাছে রেললাইন ঘেঁষে জায়গা দখল করে রাতারাতি দোকানঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রভাবশালীদের এতটাই দাপট যে কোন বাঁধাই মানেনি। রেলের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা যোগসাজশে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রাতারাতি প্রকাশ্যে দখলের কারবার করেছে, কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। গেল ক’দিনের যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চলের কয়েক জেলা সফরে এবং সরেজমিন গিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় লোকজন খুশি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বগুড়া সার্কিট হাউসে সুধীজনের সামনে বলছিলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যে সব সমস্যা আছে তা সমাধানে চারটি পন্থা তৈরি করেছেন। প্রথমে ‘ইমিডিয়েট অর্থাৎ এখনই। দ্বিতীয় শর্ট টার্ম। এরপর মিড টার্ম এবং লং টার্ম। সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তারপরও কোন পথের বেহাল অবস্থার ছবি দেখলেই কৈফিয়ত তলব করেন। মন্ত্রী কোথাও গেলেই বলেন, জনগণকে স্বস্তি দেয়ার জন্যই তাঁকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। জনগণ যদি পথ চলতে স্বস্তিই না পেল তাহলে কিসের মন্ত্রী। এ কারণেই তিনি বেশিরভাগ সময়ে পথেই থাকেন। বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। যে কাজ করে যাবেন তা যেন চিরস্থায়ী হয়। তিনি পরিষ্কার করে বলেন, দুর্নীতি করে সরকারী কাজে গাফিলতি করে মানুষের ক্ষতি করলে তার খবর নেবে ওবায়দুল কাদের। সান্তাহার, নওগাঁ, পাহাড়পুর, জয়পুরহাট, ঈশ্বরদী, পাবনা অঞ্চলের সড়কপথ, সড়ক সেতু, রেলপথ, রেলস্টেশন এমনকি ট্রেনে উঠে যাত্রীদের খোঁজখবর নেন। অনিয়ম পাওয়ার সঙ্গেই সাসপেন্ড, বদলি, তদন্ত ইত্যাদি ব্যবহার করে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। এর আগে পূর্বাঞ্চলের শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন জায়গায় এবং রাজধানী ঢাকায় রেলস্টেশনে গিয়ে বর্তমানের কি হাল তা দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। কয়েক এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বললে কোন রাখঢাক ছাড়াই তারা বলেন, এমন মন্ত্রী থাকলে সরকারী লোক কাজ না করে থাকতে পারবে না। বগুড়ার সোনাতলা এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি আজাহার আলী বললেন, মন্ত্রী এভাবে কাজ করলে ঠিকই কালো বিড়াল ধরতে পারবেন। তবে বিড়াল খুব চালাক। গল্পে আছে বস্তাবন্দী করে বিড়ালকে জঙ্গলে ফেলে এলেও সে ঠিকই পথ খুঁজে চলে আসে। এই সাবধানও থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.