কক্সবাজারে চারজন আটক- জামাআতুল আরাকান নামে সংগঠিত হচ্ছে জেএমবি by একরামুল হক

‘জামাআতুল আরাকান’ নামে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে নিষিদ্ধঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একাংশ। বান্দরবান জেলার আলীকদমে দুর্গম পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে দলটি উগ্রপন্থী রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে একত্র করার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।


এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কিছু সদস্য পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলেও জানা গেছে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার গভীর রাত থেকে গতকাল রোববার ভোর পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের লালদীঘি, বাস টার্মিনাল ও বাহারছড়া এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠনটির চারজনকে আটক করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন: আবদুল্লাহ ওরফে আবদুল্লাহ হেল কাফি (২৫), ওমর ফারুক ওরফে কাজী ফারুক (৩৩), মো. রুবেল (১৮) ও আবদুল মতিন (৩৭)। কাফির বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মুরগিডাঙ্গা গ্রামে, ওমর ফারুকের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পুরাতন বাজারে, মতিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী উপজেলার কুশমাইল গ্রামে আর রুবেলের বাড়ি কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাহারছড়ায়।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. বাবুল আক্তার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। জঙ্গিদের কাছ থেকে জামাআতুল আরাকানের সাংগঠনিক কাগজপত্র, পুস্তিকা, ব্যবহূত ডায়েরি ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার সেলিম মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি, কিছু উগ্রপন্থী লোক কক্সবাজারে অবস্থান করছিল। কিছুদিন আগে তারা বান্দরবানের গহিন পাহাড় থেকে এসেছিল। তারা আবার আফগানিস্তান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’ তিনি বলেন, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন বড় মাপের জঙ্গি বলে নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা। ওই জঙ্গিরা হলেন কাফি ও ওমর ফারুক। তাঁদের সম্পর্কে আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আটক চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।
আটক হওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে গতকাল এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁদের মধ্যে ওমর ফারুক বলেন, তিনি ১৯৯৯ সালের ১০ জুলাই ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু থেকে মুসলমান হন। তিনি ২০০৩ সালে হরকাতুল জিহাদে (হুজি) যোগ দেন। ওই বছরই তিনি হুজির ঢাকা মহানগর শাখার মজলিসে শুরার সদস্য হন। গত বছর তিনি মশিউর নামের জেএমবির সাবেক এক সদস্যের মাধ্যমে জামাআতুল আরাকানের সঙ্গে যুক্ত হন।
আটক হওয়া বাকি তিনজনও আগে থেকেই জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা জানান, জেএমবির সর্বশেষ আমির মাওলানা সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংগঠনটির অন্যতম কেন্দ্রীয় সংগঠক সালমান ওরফে রুহুল আমীন ওরফে তালহার উদ্যোগে জেএমবির একাংশ পাহাড়ে গিয়ে নতুন নামে পুনরায় সংগঠিত হয়। তাঁরা গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বান্দরবান জেলার আলীকদম থেকে ছয়-সাত ঘণ্টার পায়ে হাঁটা দূরত্বে দুর্গম পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেন। সেখানে তাঁরা একাধিক পরিখাও (বাংকার) খনন করেন।
আটক আবদুল্ল হেল কাফি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা পাহাড়ি এলাকায় প্রথমে পরিবারের ছদ্মবেশে বসতি গড়ে তোলেন। এভাবে মোট নয়টি পরিবার সেখানে বসতি গড়ে তোলে। এরপর ওই ঘাঁটিতে ৪৮ জন সদস্য গিয়ে অবস্থান করেন। তাঁরা শারীরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি হিন্দি ও উর্দু ভাষা শিখেছেন। কাফি তাঁদের নেতা হিসেবে সালমান ওরফে রুহুল আমীন ছাড়া আর কারও নাম বলেননি। তিনি জানান, সালমান কিছুদিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে খুন হয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানিয়েছেন, তাঁরা ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে নতুন নামে সংগঠিত হচ্ছিলেন। জিহাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তাঁরা ভারত-পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ জন্য কয়েক মাস আগে তাঁরা কয়েকজন কক্সবাজারে চলে আসেন। এর মধ্যে কাফি রিকশাচালকের ছদ্মবেশে আর ওমর ফারুক টমটমচালকের (ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান) ছদ্মবেশে ছিলেন। প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় ওমর সম্প্রতি তাঁর টমটম ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এই টাকা তাঁর কাছে পাওয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.