শীতের আগাম সবজিতে ভরে উঠছে বাজার, তবে দাম চড়া by এম শাহজাহান

শীতের আগাম শাক-সবজিতে ভরে উঠেছে রাজধানীর সব কাঁচাবাজার। শিম, মুলা শাক, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, পালংশাক, ডাঁটা শাক, ধনিয়া পাতা এবং গাজরে ভরপুর কাঁচাবাজারের ডালিগুলো যেন জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। ভাদ্র মাসে শীতের আগাম শাক-সবজি পেয়ে খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা।


কিন্তু এসব শাক-সবজি পেতে চড়ামূল্য দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
এক কেজি শিম কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে মানভেদে ৬০-৭০ টাকা। ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছোট সাইজের ফুলকপি ও বাঁধা কপির জোড়া । আর মুলা ও পালংশাকের স্বাদ নিতে প্রতিকেজিতে ভোক্তাকে দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। দাম বেশি কিন্তু তারপরও খুশি ক্রেতারা। কারণ ভাদ্র মাসেই শীতের সবজি দিয়ে ভূরিভোজ করা যাচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীর আশপাশের কৃষিজমি ও পার্শ্ববর্তী নরসিংদী, গাজীপুর, সাভার, ময়মনসিংহ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন আগাম শাক-সবজির আবাদ করা হয়। এ বছর বৃষ্টিপাত কম ও বন্যা না হওয়ার কারণে এসব শাক-সবজির উৎপাদন ভাল হয়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। এজন্য শীত আসার অন্তত তিন মাস আগে কাঁচাবাজারগুলো ভরে উঠেছে শীতকালীন শাক-সবজিতে।
রাজধানীর বিভিন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বিক্রেতারা শীতকালীন সবজি দোকানে তুলছেন। প্রায় অধিকাংশ দোকানেই শীতকালীন সবজি বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির চাহিদা থাকায় বিক্রিও ভাল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কাপ্তানবাজারের সবজি বিক্রেতা নূরুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা যহন যেইড্যা পাই হেইড্যাই বিক্রি করি। শীতকালীন গরমকালীন বুঝি না। আড়তে অহন এসব সবজি পাওয়া যাচ্ছে। আমরাও কিনে এনে বিক্রি করছি।’
তবে কারওয়ানবাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত মালিক মোঃ জসিম উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর বাজারে শীতের আগাম শাক-সবজির আমদানি ভাল হচ্ছে। ব্যাপারীরা ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব সবজি নিয়ে পাইকারি বাজারগুলোতে আসছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম ও বন্যা না হওয়ার কারণে সবজি ক্ষেতগুলো নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তাই শীতকালীন সবজিগুলো বাজারে আগাম উঠতে শুরু করেছে। যদিও শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর কিন্তু ক্রেতাদের কিনতে বেশি পয়সা দিতে হবে। এসব সবজির উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বরাবরই দাম বেশি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা ও দাম বিবেচনায় নিয়ে কৃষকরাও এসব সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। শীতে খুচরা বাজারে ১ বা দেড় কেজি ওজনের একটি ফুলকপি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়। এখন আড়াই শ’ বা তিন শ’ গ্রাম সাইজের একটি কপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। অর্থাৎ কৃষকরা কম সময়ের মধ্যে উৎপাদন করে বেশি দাম নিতে পারছেন। তবে এর জন্য আবহাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বছর আবহাওয়া ভাল হওয়ার কারণে সবজি উৎপাদন ভাল হচ্ছে।
এদিকে শীতকালীন সবজির পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য শাক-সবজির দামও চড়া। ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এলেও দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ৩০-৩৫ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। বেগুন, কাঁকরোল, পেঁপে, কচুমুখী, কচু, কাঁচকলা, ঢেঁড়সসহ কোন সবজির দাম কমেনি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। এ নিয়ে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের অসন্তুষ্টি রয়েছে। তাঁরা বলছেন বাজারে সবজির ঘাটতি নেই কিন্তু তারপরও দাম কমছে না। শীতকালীন সবজি বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী দামে। ফকিরাপুলে বাজার করতে এসে শীতকালীন সবজির দাম শুনেই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন শাজাহানপুরের বাসিন্দা মোঃ ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, সব দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতকালীন সবজি রয়েছে। কিন্তু তারপরও দাম এত বেশি কেন? সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষরা বাজারে এসে এসব সবজির ঘ্রাণ নিতে পারবে কিন্তু কিনে খেতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.