শীর্ষ তিন পাকি জঙ্গী বাংলাদেশে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে- জঈশ নেতা মাওলানা ইউনুসের তথ্য ॥ রোহিঙ্গাদের সংগঠনে ভেড়ানো হচ্ছে, ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে by শংকর কুমার দে

পাকিস্তান ও ভারতভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদের ৩ পাকিস্তানী শীর্ষ জঙ্গী রেজোয়ান আহম্মদ, বেলাল ম-ল, সাবের আহম্মদ বাংলাদেশে আত্মগোপন করে আছে। তাদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। বাংলাদেশে জঈশ-ই-মোহাম্মদের কমান্ডার মাওলানা ইউনুসকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে
ওই শীর্ষ পাকি জঙ্গী নেতাদের খোঁজ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, রামু অঞ্চলের গভীর জঙ্গলে তারা রোহিঙ্গাদের ট্রেনিং দিচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। জঈশ-ই-মোহাম্মদ কমান্ডার মাওলানা ইউনুসকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদে ইউনুস জঈশ-ই-মোহাম্মদের গোপন তৎপরতার ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা ইউনুস গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, জঈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার শতাধিক সদস্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৎপরতা চালাচ্ছে। অস্ত্র চালানো ও গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তাদের। দেয়া হচ্ছে আত্মঘাতী হামলা চালানোর কৌশল প্রশিক্ষণ। সাতক্ষীরা, যশোর, বেনাপোল সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের অন্তত অর্ধশত সদস্য বাংলাদেশে এসেছে। তবে বাংলাদেশে কোন ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা চালানোর পরিকল্পনা নেই। ভারত ও পাকিস্তানী পুলিশ এ দুটি সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতার করতে বিশেষ অভিযান চালানোর কারণে সীমান্ত গলিয়ে তারা বাংলাদেশে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশে আত্মগোপন করে তারা পাকিস্তান ও ভারতের সংগঠনের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। মাওলানা ইউনুস জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, পাকিস্তানে মার্কিনীদের হামলা অব্যাহত থাকায় সংগঠনের শীর্ষনেতাদের নির্দেশে বাংলাদেশকে তারা বেছে নিয়েছে। তার ভাষায়, আফগানিস্তান ও ইরাকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। জঈশ-ই-মোহাম্মদ সদস্যরা বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ইরাক ও ফিলিস্তিনে অবস্থান নিয়েছে। জিহাদ করতে প্রস্তুত রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গীরা।
মাওলানা ইউনুস গোয়েন্দাদের প্রশ্নের জবাবে জানায়, তাদের প্রতিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী নানা অস্ত্র চালাতে পারদর্শী। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মাঝে মধ্যে সীমান্ত এলাকা দিয়ে জঈশ-ই-মোহাম্মদ শীর্ষনেতারা এসে সদস্যদের প্রশিক্ষণসহ নানা দিক দেখভাল করেন। পাহাড়ী অঞ্চলে প্রশিক্ষণ দিতে নিরাপদ মনে করে দেশী-বিদেশী জঙ্গীরা। কারণ ওসব স্থানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যাতায়াত তেমন একটা থাকে না। কক্সবাজার, টেকনাফ, রামু, যশোর, খুলনা, ফেনী, বেনাপোলসহ আরও কয়েকটি এলাকায় সংগঠনের সদস্যরা অবস্থান করছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঈশ-ই- মোহাম্মদের সক্রিয় সদস্য বাংলাদেশের কমান্ডার মোহাম্মদ ইউনুস দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে বসবাস করে আসছেন। কক্সবাজারের রামুতে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে আসছেন তিনি। মাঝে মধ্যে তিনি সীমান্ত গলিয়ে পাকিস্তান ও ভারত গিয়ে জঈশ-ই-মোহাম্মদের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে গোপন শলাপরামর্শ করে আসেন বলে তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা আরেক পাকিস্তানী নাগরিক রেজোয়ান আহম্মদ ও বেলাল ম-লের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বিশেষ করে জঈশ-ই-মোহাম্মদের শীর্ষনেতা রেজোয়ান আহম্মদ মাওলানা ইউনুসকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। সম্প্রতি ঢাকার ফকিরাপুল থেকে গ্রেফতার হন মাওলানা ইউনুস। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা ইউনুস জানিয়েছে, পাকিস্তান ও ভারতভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদ বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় আছে তারা। গোপনে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি করছে। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অন্যান্য পাহাড়ী অঞ্চলে সদস্যদের অস্ত্র চালানো ও গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের সংগঠনে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীরা জাল পাসপোর্ট তৈরি করছে। সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া পাকিস্তানী নাগরিক ও জঙ্গী সংগঠন জঈশ-ই-মোহাম্মদের বাংলাদেশের কমান্ডার মাওলানা মোঃ ইউনুসের কাছ থেকে গোয়েন্দারা এসব তথ্য উদঘাটন করেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে মাওলানা ইউনুস জঈশ-ই-মোহাম্মদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেফতার হওয়া মাওলানা ইউনুসের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাওয়ার পর বাংলাদেশে যেসব সদস্য সক্রিয় আছে তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। জঙ্গীদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কোন্ কোন্ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাবের আহম্মদ নামে এক শীর্ষনেতাকে পাকড়াও করতে গোয়েন্দারা কাজ করছে। তিনি কিছুদিন আগে পাকিস্তান চলে গেছেন। হুন্ডির মাধ্যমে প্রতিমাসে পাকিস্তান ও ভারত থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আসছে বাংলাদেশে। জঈশ-ই-মোহাম্মদের পাকিস্তান ও ভারত থেকে আসা জঙ্গীরা বাংলাদেশে পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গ্রেফতার হওয়া মাওলানা ইউনুস মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি জাল পাসপোর্টের ব্যবসা করতেন। তার সঙ্গে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তার সুসম্পর্ক রয়েছে। মাওলানা ইউনুস রোহিঙ্গাদের সংগঠনে সংযুক্তের পাশাপাশি জাল পাসপোর্ট তৈরি করে সৌদি আরব, ইরাক, ইরানসহ মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানী নাগরিক শীর্ষ জঙ্গী নেতা রেজোয়ান আহম্মদ, বেলাল ম-ল কোথায় আছে তাদের গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.