ঈদের ছুটি সব ছিল ফাঁকা, ফের কর্মকোলাহল- চিরচেনা চেহারায় ফিরেছে রাজধানী by মোরসালিন মিজান

ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে এবারও বহু মানুষ রাজধানী ছেড়ে গিয়েছিলেন। এক রকম ফাঁকা হয়ে পড়েছিল ঢাকা। তবে গত কয়েক দিনে আড়মোড়া ভেঙ্গে যেন জেগে উঠেছে। জীবিকার প্রয়োজনে ছুটে চলেছে মানুষ।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। এভাবে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যার যার কাজে যোগ দেয়ায় চিরচেনা চেহারায় ফিরেছে রাজধানী।
ঈদে মূল ছুটি তিন দিনের হলেও একটু বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন প্রায় সকলে। তবে এবার সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মতো ছুটি ভোগ করেছেন অনেকে। লম্বা এ ছুটির শুরু ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস থেকে। ঈদের আগে সাপ্তাহিকসহ আরও কয়েকটি বন্ধ ছিল। ঈদ উদ্যাপিত হয় ২০ আগস্ট। অফিস আদালত খোলে ২২ অগাস্ট বুধবার। কিন্তু বুধ ও বৃহস্পতিবার ছুটি নিতে ভুল করেননি আয়েশি মানুষ। পর দিন ২৪ আগস্ট শুক্রবার ও ২৫ আগস্ট শনিবার ছিল সাপ্তাহিক বন্ধ। ফলে এ দিনগুলোতে দারুণ ফাঁকা হয়ে পড়েছিল ঢাকা। যানজট ছিল না। সবুজ হলুদ লালবাতি জ্বললেও সেদিকে তাকাতে হয়নি চালকদের। প্রশস্ত রাস্তায় একটি-দুটি করে গাড়ি ছুটে গেছে। অল্প স্বল্প চলেছে গণপরিবহন। এর পরও যাত্রী তেমন পায়নি। ফুটপাথ রাস্তা ময়লা করারও যেন লোক ছিল না। দারুণ ঝকঝকে তকতকে ছিল চারপাশ। যারা ঢাকায় ঈদ করেছেন তারা এতে বেশ মজা পেয়েছেন। মনের মতো করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিশ্বাস নিয়েছেন প্রাণভরে। কেউ কেউ কেবল ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন দিনের পর দিন।
ঈদের দু’-তিন দিন পর থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করে মানুষ। প্রতি দিনই বাড়তে থাকে জনসংখ্যা। পূর্ণতা পায় ২৬ আগস্ট রবিবার। এদিন থেকে সরকারী-বেসরকারী অফিসে উপস্থিতি প্রায় শতভাগ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাতেও কাজ চলছে পুরোদমে। সবশেষে খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘ ছুটির পর মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগে ২৩ আগস্ট খুলে বুয়েট। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় খোলে ২৬ আগস্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে খুলেছে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেই চিরচেনা পরিবেশ। ক্লাস হচ্ছে। গল্প আড্ডা হচ্ছে। ঈদের পর প্রথম দিন হওয়ায় শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে অনেককে। অর্থনীতি প্রথম বর্ষের ছাত্র আরাফাত বললেন, ক্যাম্পাসটা এখনও নতুন আমাদের কাছে। এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়তে ইচ্ছা করে না। তবে ঈদের কথা আলাদা। তাই ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। তখন টেলিভিশন সংবাদে দেখেছি, ঢাকা ফাঁকা। ক্যাম্পাসে কেউ নেই। তবে এসে ভরপুর ক্যাম্পাস পেয়েছি। তাই খুব ভাল লাগছে। মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের হেড
অফিসে কাজ করেন শিহাব উদ্দিন। তাঁর কণ্ঠেও অভিন্ন সুর। বললেন, সারা বছর কাজের মধ্যে থাকি। তাই ঈদের ছুটিটা বেশ উপভোগ করেছি। ঢাকায় ঈদ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ সময় পুরো শহরটা নিজের মতো করে দেখা হয়েছে। যানজট ছিল না। ভিড় ধাক্কা গায়ে গা লেগে যাওয়ার মতো ব্যাপার ছিল না। ফলে পরিবারের সকলকে নিয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছি। মন ফুরফুরে থাকায় এখন কাজ করে বিশেষ ভাল লাগছে বলে অভিমত তাঁর। মতিঝিল এলাকার রিকশা চালক আলী জানালেন, ঈদের ছুটিতে শহরেই রিকশা চালিয়েছেন। প্রথম কয়েক দিন বেশ ভাল লেগেছে। সব রাস্তায় ঢোকা গেছে। ফাঁকা রাস্তায় রিকশা চালিয়েও মজা পেয়েছেন। কিন্তু যাত্রী কম হওয়ায় আয় তেমন হয়নি। এখন মানুষ আগের মতো হওয়ায় আয়ও আগের মতো বেড়েছে বলে জানান তিনি। এখন তাঁর মতÑ মানুষ বেশি হলেই ভাল।
এভাবে জীবিকার প্রয়োজনে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ কাজে ফিরেছে। আর চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী শহর ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.