একটিই বার্তা দিতে চাই- রাজনীতি মানে জনকল্যাণ, মানুষের সেবা- গাজীপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাজউদ্দীনকন্যা রিমি

সিমিন হোসেন রিমিই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য সকল প্রার্থীই তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। রবিবার রাতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের এই কন্যা।


আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিশ্চিত হলেও মহাজোটের একক প্রার্থিতার ক্ষেত্রে কিছুটা জট বেঁধেছে। আগামী নির্বাচনে এরশাদের এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা বাস্তবায়নে এই উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পৃথক প্রার্থী দেয়ার আভাস দিয়েছে। বিএনপি উপ-নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাসদ যৌথভাবে বাম গণতান্ত্রিক বলয়ের প্রার্থী হিসেবে সিপিবির গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদলের নাম ঘোষণা করেছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর রবিবার প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। তিনি বলেন, ছোট ভাই সোহেল তাজের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, আমি নির্বাচন করছি কাপাসিয়ার জনগণের দায়িত্ব নিতে। তিনি বলেন, কাপাসিয়ার জনগণ অভিভাবকহীন। তাদের অনুরোধ ও ভালবাসার কথা বিবেচনা করে নির্বাচনে সম্মত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীও আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বিএনপিকেও উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
গাজীপুর-৪ আসন থেকে পদত্যাগকারী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেসেজ পাঠিয়ে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় বোন সিমিন হোসেন রিমিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রবিবার বনানীর ডিওএইচএসের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ তথ্য জানান।
রবিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ওই আসনের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমদ এমপি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমদ, বাহাউদ্দিন নাছিম, মৃণাল কান্তি দাস, আফজাল হোসেন ও এনামুল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস জনকণ্ঠকে জানান, গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের জন্য রবিবার রাতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করেছেন সিমিন হোসেন রিমি। এ সময় রিমি দলের সিনিয়র নেতাদের কাছ থেকে দোয়া কামনা করেন। মনোনয়নের আবেদনপত্র গ্রহণের সময় গাজীপুর ও কাপাসিয়ার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে সকালে বনানীর ডিওএইচএসের বাসায় গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সিমিন হোসেন রিমি। ওই বৈঠকে সব প্রার্থীই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী রিমিকে অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদানের পাশাপাশি তাঁর বিজয় নিশ্চিত করতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার সিমিন হোসেন রিমি কাপাসিয়ায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু করবেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বৈঠকে ওই আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, মাহমুদুল আলম খান বেনু, শহীদুল্লাহ, আমানত হোসেন খান, নাজমুল ইসলাম পিন্টু, আনিসুজ্জামান আরিফ, এ্যাডভোকেট মিলন সরকার, ফজলুর রহমান মোল্লাসহ কাপাসিয়ার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাই ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আফছার উদ্দিন খান উপস্থিত থাকতে না পারলেও শনিবার সিমিন হোসেন রিমির সঙ্গে সারাদিনই ছিলেন। তাঁরাই সবাই সিমিন হোসেন রিমির পক্ষে কাজ করার কথা বলেছেন।
এদিকে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, রবিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক প্রার্থী দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। মহাজোটের বাইরে গিয়ে এককভাবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে মর্মে এরশাদের সম্প্রতি ঘোষণার পর এটিই হতে যাচ্ছে তার প্রথম প্রয়োগ। প্রার্থিতা চূড়ান্ত না হলেও সূত্রগুলো বলছে, গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকেই প্রার্থী করা হতে পারে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) রবিবার যুক্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাম গণতান্ত্রিক বলয়ের প্রার্থী হিসেবে সিপিবির গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ বাদলের নাম ঘোষণা করেছে। সিপিবির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান এবং বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের যৌথ স্বাক্ষরে এই প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়। সিপিবি বাম নেতা বাদলকে আগেই উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দিয়েছিল।
সাংবাদিকদের রিমি আরও যা বলেন
বনানীর ডিওএইচএসের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘অভিভাবকহীন’ জনগণের দায়িত্ব নেয়ার জন্যই আমি এ আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কাপাসিয়ার জনগণের সেবায় আমি নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগ এ আসনে তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে জনকল্যাণে কাজ করার সুযোগ দেয়ায় রিমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এ আসনের উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমি বলেছিলাম চিন্তা করে দেখব। আর এটাকেই অনেকে পজিটিভ মনোভাব হিসেবে দেখেছেন। কাপাসিয়ার জনগণের এমন মনোভাব দেখে একপর্যায়ে মনে হলো নির্বাচন করাই যুক্তিযুক্ত। আর তাই সম্মত হয়েছি। আশা করি, নির্বাচনে সবার সহযোগিতা ও সমর্থন পাব।
ছোট ভাই সোহেল তাজ প্রসঙ্গে সিমিন হোসেন রিমি আরও বলেন, সবার একটা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। ওর কর্মক্ষেত্রে সে (সোহেল তাজ) হয়ত সঠিক ছিল। তবে আমি বলতে পারি, ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি না। তিনি বলেন, কাপাসিয়াতে আমি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত। সেখানে একটি পাঠাগার নির্মাণ, শিশুদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, স্কাউটস আন্দোলন এবং কাপাসিয়ার প্রায় ৫০টি স্কুলকে এতে সম্পৃক্ত করেছি। এ ছাড়া মাদকবিরোধী আন্দোলনও পরিচালনা করে আসছি।
গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমি একটি বার্তা দিতে চাই, সেটা হচ্ছে রাজনীতি মানে জনকল্যাণ, মানুষের সেবা করা। আমি সারাজীবন এ কাজটি করে যেতে চাই। ‘সোহেল তাজ রাজনীতিতে এসেও কোন ছাড় দেননি, আপনি কি ছাড় দেবেন?’ সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি বুদ্ধি করে চললে সমস্যা হওয়ার কথা না। মন্ত্রিত্ব দেয়া হলে তা গ্রহণ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রিত্ব বড় কথা নয়, বরং কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।
উল্লেখ্য, হঠাৎ করেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজের ২০০৯ সালের ৩১ জুন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ এবং গত ৭ জুলাই ঢাকায় এসে সশরীরে স্পীকারের কাছে সংসদ সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের আবেদন জানালে তা গৃহীত হয়। পরে স্পীকার গাজীপুর-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করার পর নির্বাচন কমিশন এই আসনের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।

No comments

Powered by Blogger.