পদত্যাগে আপত্তি নেই মসিউরের

পদত্যাগের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ড. মসিউর রহমানের ওপর কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছে তাঁর পারিবারিক সূত্র। তবে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের স্বার্থে পদত্যাগে আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।


গতকাল রবিবার বিকেলে তাঁর হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমি পদত্যাগ করলে যদি ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণের সুরাহা হয়, তাহলে আমি একবার কেন, দশবার পদত্যাগ করব।' একই সঙ্গে তিনি বলেন, কেবল অভিযোগ করলেই হবে না, সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে হবে বিশ্বব্যাংককে। সেই সঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও থাকতে হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের নানামুখী তৎপরতার মধ্যে হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে ড. মসিউরের পদত্যাগ প্রসঙ্গ। ঈদের ছুটির পর থেকেই এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মতামত জানানো হয়নি। গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন ড. মসিউর। বৈঠক থেকে ফিরে বাসার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মসিউর বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের চাপে নয়, দেশের স্বার্থে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছি না, তাহলে পদত্যাগ করব।'
ড. মসিউর বলেন, 'বিশ্বব্যাংক আমার বিরুদ্ধে যেসব নালিশ করেছে, সেগুলোর সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে হবে। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দিতে হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া বিশ্বজুড়ে সভ্য আচরণ।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজার মসিউর রহমান আরো বলেন, 'প্রাচীন গ্রিসে যখন কোনো স্থাপনা তৈরি করা হতো, তখন তার নিচে মানুষের রক্ত দেওয়া হতো। মানুষের রক্ত যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন মোরগের রক্ত দেওয়া শুরু হলো। তারও যখন অভাব দেখা দিল, তখন মোরগের ছায়ার ওপর ভবন নির্মাণ শুরু হলো। এরপর ওই ছায়াকে ঘিরে একধরনের বাণিজ্যও তৈরি হয়েছিল। কাউকে দোষ দিতে হলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।'
মসিউর রহমানের পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার ব্যাপারে কোনো ধরনের নির্দেশ বা চাপ দেওয়া হয়নি।
মসিউর রহমান পদত্যাগ করেছেন- গতকাল সন্ধ্যায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মূলত বিকেল সোয়া ৫টার দিকে হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাত ১০টা পর্যন্ত না ফেরায় তাঁর পদত্যাগের এ গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বলতে থাকেন, তিনি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে তাঁর পদত্যাগের ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে মসিউর রহমানের সহকারী একান্ত সচিব তপন কুমারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নাকচ করে দেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। আর স্যার সন্ধ্যার পর গণভবনেও যাননি।'

No comments

Powered by Blogger.