সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতিঃ হুমকির মুখে গণতন্ত্র

মহাজোট সরকারের এক বছর পার হতে না হতেই তাদের আসল চেহারা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড, জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে মন্ত্রী-এমপিদের কথাবার্তা সব খানেই ঘুরেফিরে একটা বিষয়ই প্রাধান্য পাচ্ছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপির প্রতি বিষোদ্গার। জিয়াকে খুনি বলা ও তার লাশ নিয়ে কটূক্তি কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না জাতীয় সংসদে। ক্ষমতার জোরে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে।

অর্থনীতি, সমাজ বা জনগণের সমস্যা নয়, এসবই যেন সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়। প্রতিহিংসার রাজনীতির এই চিত্র যে সাধারণ মানুষের অজানা নয়, সেটা জানা গেছে গতকাল আমার দেশ-এ প্রকাশিত পাঠকের মতামত থেকে। জিয়াউর রহমানের প্রতি বিষোদ্গার করে গণতন্ত্রের কী উপকার হচ্ছে—এমন প্রশ্নের ওপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঠানো দু’শতাধিক পাঠকের মতামতে বিষয়টা খুবই পরিষ্কার। এই প্রতিহিংসার রাজনীতির লক্ষ্য শুধু বিরোধী দল ও নেত্রীর প্রভাব ক্ষুণ্ন করা নয়, গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করাও। এমন মতামত দিয়েছেন অনেকেই। অতীতেও আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এমনটাই দেখা গেছে। স্বাধীনতার পর তত্কালীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় বিপুলভাবে নির্বাচিত হয়ে ১৯৭৫ সালে সংসদীয়ভাবেই কায়েম করেছিলেন বাকশাল। সে দুঃসহ স্মৃতি মানুষের মন থেকে এখনও একেবারে মুছে যায়নি। হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীকে জীবন হারাতে হয়েছিল সে সময়। জনগণের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। সংবাদপত্রও স্বাধীনতা হারিয়েছিল। মাত্র ৪টি সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ক্ষমতাসীনদের কথাই প্রচার করত। পুলিশ, রক্ষীবাহিনী ছাড়াও মুজিববাহিনী, লালবাহিনীর মতো প্রাইভেট বাহিনীর অভাব ছিল না। তাদের দাপট সত্ত্বেও মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিল সে দুঃশাসনকে। ফলে খান খান হয়ে যেতে সময় লাগেনি বাকশালী শাসনের। তার জের চলত বহুদিন, যদি সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হতেন, পুনরায় বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু না করতেন। এ ইতিহাস কেউ কেউ অস্বীকার করতে চাইলেও আমজনতার মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না—সেটা পাঠকের মতামত থেকেই নিশ্চিত বলা যায়।
শুধু জিয়াউর রহমান ও বিএনপিকে ধ্বংসের চেষ্টাই নয়, এ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই চলছে নোংরা দলীয়করণ ও আইন-লংঘনের ঘটনা। গণপ্রশাসনের বিশৃঙ্খলা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজেই ফুটে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এমন হয়ে উঠেছে যে, সাধারণ ছাত্ররা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার দলীয় পরিচয়পত্র বহন করতে বাধ্য হচ্ছে। আইন রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর আইনবহির্ভূত কাজের শিকার শুধু বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী নয়, সাধারণ মানুষও। রিমান্ডের নামে পুলিশের ডিমান্ড মেটাতে না পারায় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। উচ্চআদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করা অতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রিমান্ডের আসামিদের মিডিয়ার সামনে এনে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে জরুরি অবস্থার অসাংবিধানিক সময়ের মতোই। এ সবই যে বহুল উচ্চারিত মানবাধিকার ও সংবিধানের পরিপন্থী সেটা কাউকে আমলে নিতে দেখা যাচ্ছে না। প্রচলিত আইনের বরখেলাপ হলেও সরকার ভ্রূক্ষেপ করছে না। পত্রিকায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ করাও সহ্য করা হচ্ছে না। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা ও হামলার পর এখন দুদক পেছনে লেগেছে।
এসবই সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ—এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। গণতন্ত্র রক্ষা করতে এখন এগিয়ে আসতে হবে, এটাই শেষ কথা। নইলে সবাইকে হুমকির মুখে পড়তে হবে।

No comments

Powered by Blogger.