আমিরাতে জনশক্তি নিয়োগ বন্ধ হয়নি, সীমিত আকারে ভিসা দেয়া হচ্ছে- সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী

সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি নিয়োগ বন্ধের খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করেনি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা বাংলাদেশকে এখনও কিছু জানায়ওনি।


এখনও সেদেশে ‘সীমিত আকারে’ ভিসা দেয়া হচ্ছে। রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী জনশক্তি নেয়া কিংবা ভিসা নবায়ন বন্ধ ঘোষণার খবর সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত কখনও বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেনি। আর আনুষ্ঠানিকভাবে নেয়ার ঘোষণাও দেয়নি। সীমিত আকারে দেশটি ভিসা দিচ্ছে। গতকালও (শনিবার) তারা মহিলা কর্মীদের ভিসা দিয়েছে।
সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া এক বছর আগেও বন্ধ ছিল। এরপর শ্রমিক নেয়ার ঘোষণাও তারা দেয়নি। কিন্তু প্রতিদিন কিছু না কিছু শ্রমিক দেশটিতে যাচ্ছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত এক বছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কর্মী বিদেশে গেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের সাত মাসেই গেছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার। দেশের জনশক্তি রফতানি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, আগে মাত্র ১৫টি দেশে জনশক্তি রফতানি হতো। বর্তমানে ১৪৩টি দেশে শ্রমিক যাচ্ছে। সম্প্রতি জাপানে ১৫ জন শ্রমিক যাওয়ার পর নতুন করে দুই হাজার লোকের চাহিদা পেয়েছে বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, দেশটি বাংলাদেশ থেকে সরকারী তত্ত্বাবধানে জনশক্তি নিতে আগ্রহী। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মালয়েশিয়া সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশ সফরে আসবেন। এর পর আলোচনা সাপেক্ষে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। সরকারী ঘোষণা আসার আগেই মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কোন শ্রমিককে কোন এজেন্সিকে টাকা না দেয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, শ্রমিক নেয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হবেÑ কোথায় কার কাছে কত টাকা জমা দিতে হবে।
ইতালিতে বিদেশী শ্রমিকদের গণবৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, গণবৈধতা দেবে এমন সিদ্ধান্ত তারা নেয়নি। গণবৈধতা দিলে তার আগে তারা লোকজন নেয়া কমিয়ে দেয়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে এ বিষয়টি নিয়ে নিজের দফতরে প্রবাসী কল্যাণ সচিব জাফর আহমেদ খান এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শামসুন নাহারের সঙ্গে বৈঠক করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সম্প্রতি সৌদি আরব সরকার জনশক্তি আমদানির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম জারি করেছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সৌদির স্থানীয় কর্মসংস্থানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতি দু’জন বিদেশী শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর বিনিময়ে সরকার থেকে একটি ভিসা নিতে পারবে।
অপরদিকে জানা গেছে, হঠাৎ করেই বাংলাদেশী শ্রমিকদের অনুকুলে ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার (ইউএই)। মধ্যপ্রাচ্যের প্রচলিত শ্রমবাজার যখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রতিকুলে, তখন অন্যতম ভরসাস্থল ইউএই সরকারের আকস্মিক এ সিদ্ধান্ত চিন্তায় ফেলে দিয়েছে সরকারকে। কেননা সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি বন্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ শ্রমবাজার ইউএই। বর্তমানে সেখানে ১৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। গত মাসে দেশটিতে ৬২ হাজার ৭১৩ বাংলাদেশী কাজ নিয়ে গেলেও এ মাসের ২২ দিনে মাত্র ২৭ হাজার শ্রমিক যেতে পেরেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন ভিসা ইস্যু না করার পাশাপাশি পুরনোদের ভিসা নবায়নও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত দু’সপ্তাহ ধরে ইউএই কর্তৃপক্ষের এ আচরণে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দু’সপ্তাহ ধরে আরব আমিরাতের বিভিন্ন এলাকার কিছু বাংলাদেশী নাগরিক ভিসা আবেদন করে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এর আগে গত শুক্রবার বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে লোক নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি সেখানে আর লোক নেয়া হবে না। আরব আমিরাত এখন ভিসা ইস্যুও করছে না। নবায়নও বন্ধ করে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.