জেলা সফরে বের হবেন খালেদা-জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আজ

কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে সরকারকে বাধ্য করার জন্য বিএনপি জনমত গড়ে তুলবে। এ লক্ষ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিভিন্ন জেলা সফর করবেন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি সিলেট সফর করবেন।
এরপর পর্যায়ক্রমে আরো কয়েকটি জেলা সফরে যাবেন। গতকাল রবিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এসব জানা গেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, আজ সোমবার রাতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। এই বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার পর আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর মহাসচিবদের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঈদের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা আগেই ছিল বিএনপির। এ নিয়ে গতকাল রবিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক চলে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।
বৈঠক চলাকালে রাত ১০টার দিকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিপর্যস্ত অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচিসহ বেশ কিছু এজেন্ডা আলোচনায় আছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ সোমবার জানানো হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব, এরশাদের ভারত সফর, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা এবং দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল করা, পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের দূর্নীতি, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি-নির্যাতন, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বিরোধীদলের ভবিষ্যত আন্দোলনের কর্মকৌশল পরিকল্পনা ও জেলা সফরের কর্মসূচিসহ কোরবানীর ঈদ, হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গা পূজা, নভেম্বরে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। তবে কোনো বিষয়ই চূড়ান্ত হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন, ৩ সেপ্টেম্বর দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস ও ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা। সারাদেশে কারামুক্তি দিবস যথাযথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গণি, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, সারোয়ারি রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
মওদুদ আহমদ বিদেশ, তরিকুল ইসলাম তাঁর নির্বাচনী এলাকা যশের এবং এম শামসুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তারেক রহমান লন্ডনে চিকিৎসাধীন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জেলে থাকায় বৈঠকে ছিলেন না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহালের দাবিতে বিএনপি ঈদ পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল। গত ১১ জুন রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দাবি না মানলে ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

No comments

Powered by Blogger.