প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান- অনুন্নত তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষই বাস করছে দারিদ্র্য সীমার নিচে

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ যেখানে বিলাসী জীবনযাপনে ব্যস্ত, সেখানে অনুন্নত তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষই বাস করছে দারিদ্র্য সীমার নিচে। জীবনযাত্রার নিম্ন মান, অপুষ্টি, শিক্ষার অভাবসহ নানামুখী সমস্যায় পতিত বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষগুলো পাচ্ছে না তেমন নাগরিক সুবিধা লঙ্ঘিত হচ্ছে তাদের মানবাধিকার।


আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়া অঞ্চলে এদের বেশি দেখাা যায়। সমাজে সমানাধিকার নিশ্চিত করার জন্য দরিদ্র মানুষগুলোর জীবনমান উন্নয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। বিশ্বজুড়ে যে দারিদ্র্য বিদ্যমান তার সমাধান করা না গেলে চলতেই থাকবে অনাচার ও অনিয়ম। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হতে বের না হলে সমাজে ফিরে আসবে না শান্তি। এই ব্যাপারটি অনুধাবন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল নিউট্রিশন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁর এই আহ্বান ছিল সময়োচিত। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা আজ আর কেবল কোন একক দেশের জাতীয় ইস্যু নয়। এর প্রভাব বিশ্বের সর্বত্রই। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সমগ্র বিশ্বকে তাদের সম্পদ কাজে লাগানো, অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ ফলাফল এবং প্রযুক্তি ভাগাভাগি এসব ইস্যুতে কৌশলগত বিভিন্ন দিকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নে নিজেদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মূলত ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণে সহায়ক নীতি হিসেবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টা নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এক্ষেত্রে তিনি খাদ্যশস্যের আঞ্চলিক মজুদ, খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা বা কোন কারণে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগের নিশ্চয়তার অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করেন।
তাঁর আহ্বান অনুযায়ী যদি সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো একযোগে হয়ে সমন্বিতভাবে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে তবে অবশ্যই মানুষ দারিদ্র্যের কশাঘাত ও অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। ক্ষুধা হচ্ছে সবচেয়ে তীব্র ও যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা। অথচ এক শ’ কোটি ক্ষুধার্ত ও পুষ্টিহীন মানুষ এই বিশ্বে বাস করছে। এই মানুষগুলো ব্যাপক আকারে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, এমনকি এদের মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। তীব্র ক্ষুধার কারণে উন্নয়নশীল দেশে বসবাসকারী প্রায় ১৪ কোটি ৬০ লাখ লোকের ওজন কম। বিশ্বে অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্য দক্ষিণ এশিয়াই শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখী নীতিমালা ও পদক্ষেপের কারণে দরিদ্র লোকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। গত সাড়ে তিন বছরে অপুষ্টির শিকার দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪২ ভাগ থেকে কমিয়ে ৩৬ ভাগে আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী যদি বিশ্বের সকল রাষ্ট্র সমন্বিত প্রয়াসের ভিত্তিতে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে তবে এই পৃথিবীর মানুষকে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বের করে আনা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.