শার্টের দামে মাসের বেতন

পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন বহুলাংশে নির্ভর করে এই শিল্পের ওপর। বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। কিন্তু নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে পোশাক শিল্পে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে; শ্রমিকদের মধ্যেও অসন্তোষ বিরাজ করছে।


বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্পখাতে এ ধরনের অস্থিরতা ও অসন্তোষ মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। কারণ অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। পৃথিবীর সর্বাধিক পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে চীনের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পোশাক শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত হলে এবং সেই সঙ্গে অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষ দূর হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে পোশাক শিল্পে উৎপাদন আরও বহুগুণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ পোশাক রফতানির দিক দিয়ে চীনকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবার আগে দরকার শ্রমিক অসন্তোষ দূর করা।
বাংলাদেশে রফতানি আয়ের বেশির ভাগই আসে পোশাক শিল্প থেকে। অনেক ব্যবসায়ী পোশাক শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিপুল বিত্তের অধিকারী হয়েছেন। যারা একটি কারখানার মালিক ছিলেন, তারা এখন দু’তিনটি কারখানার মালিক। কিন্তু পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। বাজারে মোটামুটি মানসম্পন্ন একটি শার্টের দাম ৩ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের মাসিক ন্যূনতম বেতন ৩ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন কাঠামো কতটা সঙ্গতিপূর্ণ এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। গার্মেন্টস শ্রমিকরা অবশ্যই মালিকদের কাছ থেকে ন্যায্য আচরণ প্রত্যাশা করেন। শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাদের এ ন্যায়সঙ্গত দাবি এখনও মানা হয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বঞ্চনার মাধ্যমে মূলত দেশের নারী শ্রমিকদেরই বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশে সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পরিকল্পনাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কম। বাংলাদেশে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক প্রতি মাসে ন্যূনতম বেতন পান ৫৫ মার্কিন ডলার; অন্যদিকে চীনে ও শ্রীলঙ্কায় একজন গার্মেন্টস শ্রমিক প্রতি মাসে ন্যূনতম বেতন যথাক্রমে ২০৬ ডলার ও ১০৭ ডলার। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বৈষম্যের কোন তুলনা হয় না। তাই দেশে পোশাক শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হবে। শুধু বেতন বৃদ্ধি নয়, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা সক্রিয়ভাবে ভাবতে হবে। তাদের অবস্থার উন্নতি হলে বাংলাদেশে পোশাক শিল্প খাতে উৎপাদন ও রফতানি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবেÑএটাই সবার ধারণা।

No comments

Powered by Blogger.