৬৫ নাগরিকের বিবৃতি-গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ

গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে সরকারের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৬৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার ও সরকারপ্রধান প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের নামে তা ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।


বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী পরিষদের সাবেক সদস্য ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'গ্রামীণ ব্যাংক শুধু একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই নয়, যা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে নারী জাগরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে একটি মডেল হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে; যার অনন্য সাফল্যের স্বীকৃতি নোবেল পুরস্কার অর্জন। নোবেলজয়ী এই প্রতিষ্ঠান এবং এর রূপকার বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন শুধু ব্যক্তি ড. ইউনূস বা গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নয়, এ সাফল্য বাংলাদেশ তথা দেশের ১৬ কোটি জনগণের।'
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ঋণ বিতরণই করে না, তারা গ্রামীণ পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, শিশু-মাতৃসেবা, শিক্ষা ও পুষ্টিশিক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত আবাসনব্যবস্থা, স্যানিটেশন এবং অন্যান্য কার্যক্রমে জনগণকে সচেতন করাসহ সার্বিকভাবে সুষ্ঠু জীবনযাপনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এই গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বাধা পেরিয়ে ড. ইউনূস যখন এই ব্যাংক সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, ঠিক এই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসার রোষানলে পতিত দরিদ্র জনগণের মালিকানাধীন এই ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশ ও সমাজের অন্যদের মতো আমরা শঙ্কিত।'
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, 'ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্যতম অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কর্মক্ষম করে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যার মাধ্যমে দেশে নারী জাগরণে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে; যার সুফল ধীরে ধীরে দেশবাসী পেতে শুরু করেছে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, নারী জাগরণের এই ব্যাংককে ধ্বংস করবেন না।'
বিবৃতিতে বলা হয়, 'অধ্যাদেশ সংশোধনের নামে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করার নেতিবাচক সিদ্ধান্তে দেশ-বিদেশে আমাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বাতিল করে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমকে অধিকতর সহযোগিতা করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিকে শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।'
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিয়া, অধ্যাপক ড. মুস্তাহিদুর রহমান, অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দৌজা বাদল, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহাম্মেদ, রহুল আমিন গাজী, শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদাল আহাম্মেদ, অধ্যাপক ডা. এম এ মাজেদ, অধ্যাপক ডা. এ বায়েস ভুঁইয়া, অধ্যাপক ডা. এম এ তাহের, অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান, অধ্যাপক ডা. মবিন খান, অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হাসান, অধ্যাপক ডা. সুলতানা জাহান, অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা, অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. রফিকুল কবির লাবু, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, অধ্যাপক ড. জেড এন তাহমিনা, অধ্যাপক ড. তাজমেরি এস ইসলাম, প্রকৌশলী আ ন হ আক্তার হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ, কৃষিবিদ আনোয়ারুল নবী মজুমদার বাবলা, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.