পুলিশ পরিদর্শক প্রথম, উপ-পরিদর্শক হলেন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

অবশেষে পুলিশ পরিদর্শকদের প্রথম ও উপ-পরিদর্শকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে মানোন্নয়ন করেছে সরকার। গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ-সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। আজ-কালের মধ্যে এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হবে বলে জানা গেছে।


এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে এক যুগ ধরে পুলিশের এই পদের কর্মকর্তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি-সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হলো এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিরও বাস্তবায়ন হলো। ২০০৯ সালের পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিষয়টি এত দিন অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে আটকে ছিল।
মানোন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি আমিও শুনেছি। এটা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এ দাবি পূরণ হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি।'
ব্রিটিশ আমল থেকেই পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের মর্যাদা খাটো করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে একজন কনস্টেবল ও একজন সাব- ইন্সপেক্টরের মর্যাদা প্রায় একই। এটা কাজের ক্ষেত্রে বিব্রতকর বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। মানোন্নয়নের ফলে নতুন বেতন কাঠামোতে খুব বেশি সুযোগ সুবিধা না পেলেও এতে পরিদর্শক এবং উপ-পরিদর্শকদের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে।
প্রায় ১৮ হাজার কর্মকর্তার পদমর্যাদাসংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত ছিল পুরো পুলিশ বিভাগ। কর্মকর্তারা বিষয়টিকে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে গণ্য করে আসছিলেন এবং বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বিভাগে অসন্তোষও চলছিল।
২০০৮ সালের ১১ মে পুলিশের ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে এবং সাব-ইন্সপেক্টর পদকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে উন্নীত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করা হয়। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত গ্রহণ এবং নিয়োগবিধিসহ প্রাসঙ্গিক বিধিবিধান সংশোধন ও প্রচলিত যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের কথাও বলা হয়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে সম্মতি দেয়। ২০ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সম্মতি প্রদানের জন্য প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। কিন্তু ফাইলটি এত দিন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে ছিল। গতকাল মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের আগে এই ফাইলে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারা দেশে তিন হাজার ৮৪ জন ইন্সপেক্টর কর্মরত। তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদায় (বেতন স্কেল-৫১০০ টাকা) কর্মরত। ইন্সপেক্টর পদ নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর করা হলে বেতন বাবদ প্রতিবছর মাত্র ৫১ লাখ টাকা ব্যয় বাড়বে। অন্যদিকে সারা দেশে ১৪ হাজার ৩০০ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে তৃতীয় শ্রেণী (বেতন স্কেল-৪১০০ টাকা) থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করলে সরকারের বছরে পাঁচ কোটি ১২ লাখ টাকা খরচ বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া-সংক্রান্ত ফাইলেও স্বাক্ষর করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.