কুষ্টিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ১০০ সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেই by তৌহিদী হাসান

কুষ্টিয়ায় জিকে সেচ প্রকল্পের খালের ওপর নির্মিত প্রায় ১০০টি সেতু মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেতুগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় ইতিমধ্যে প্রায় সবগুলোকেই পরিত্যক্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার পরও সেতুগুলো সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেই।


বৃষ্টি ও বন্যার পানির তোড়ে সেতুগুলো ধসে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছে।
পনি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুষ্টিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের সেচসুবিধা দিতে জেলায় জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় খাল খনন করা হয়। ১৯৬৫ সালের দিকে পাউবো মানুষের চলাচলের জন্য খালের ওপর সর্বোচ্চ ১৫০ ফুট ও সর্বনিম্ন ৫০ ফুট দীর্ঘ প্রায় ১০০টি সেতু নির্মাণ করে। কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সেচ প্রকল্পের খালের ওপর এসব সেতুর অবস্থান। বর্তমানে সেতুগুলো মানুষ ও যান চলাচলের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ভেড়ামারার বেশির ভাগ সেতুর দুই পাশের রেলিং ভেঙে পড়েছে। মিরপুরের আমলা ইউনিয়নের খামারপাড়া এলাকার সেতুটি মাঝখানে ভেঙে দেবে গেছে। সদরপুর ইউনিয়নের আজমপুর এলাকার সেতুটির দুই পাশের রেলিং খসে পড়েছে। কুমারখালির গোবরা চাঁদপুর এলাকায় সেতুর দুই পাশের রেলিং খসে পড়েছে।
কুমারখালির গোবরা গ্রামের কামরুজ্জামান জানান, সেতুতে রেলিং না থাকায় তিন বছর আগে এই সেতু পার হতে গিয়ে স্থানীয় টিটুর ছেলে সুজন নিচে পড়ে যায়। মালেক নামের এক ব্যক্তি জানান, গত বছর রাতে সেতু পার হতে গিয়ে সাইকেলসহ নিচে পড়ে তিনি কোমরে ব্যথা পেয়েছেন। এখনো তাঁর চিকিৎসা চলছে।
মিরপুরের আমলা ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, খামারপাড়ার এই সেতুটি ভেঙে পড়লে পোড়াদহ ও আমলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়বে।
ভেড়ামারা এলাকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এসব সেতু দিয়ে পার হয়। তাদের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য শহরে সরবরাহ করে। কিন্তু ব্রিজের যে অবস্থা, তা কখন যে ধসে পড়ে, বলা মুশকিল। সব সময় আতঙ্কে থাকি।’
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা চান মণ্ডল জানান, গোবিন্দগুনিয়ায় জিকে খালের ওপর সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে।
পাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার জানান, প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো এসব সেতু পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। প্রতিদিনই সেতুগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে। কয়েকটি সেতুতে ‘ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ’ লেখা সাইন বোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশনা মানা হয় না। তিনি আরেও জানান, এসব সেতু সংস্কারের জন্য ১৮৬ কোটি টাকার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতি বছরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এগুলো সংস্কারের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.