পদ্মা সেতু-বিশ্বব্যাংক দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিক

পদ্মা সেতুর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে এ দেশের সহজ যোগাযোগে সহায়তা করবে এ সেতু। এর ফলে বাংলাদেশসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে।


প্রকৃতপক্ষে এ বক্তব্যে তেমন নতুন কিছু নেই। শুধুু বাংলাদেশের জনগণ নয়, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোও এ সেতুর উপযোগিতা উপলব্ধি করে এবং সে কারণে তারা সহজশর্তে ঋণ প্রদানে সম্মতও হয়েছিল। কিন্তু প্রধান ঋণদাতা ও প্রকল্পের মূল সমন্বয়কারী বিশ্বব্যাংকের তরফে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সম্ভাবনার অভিযোগ উত্থাপন এবং তা থেকে সৃষ্ট তিক্ততার প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংক জুন মাসের শেষ দিকে ঋণচুক্তিই বাতিল করে দেয়। সৈয়দ আবুল হোসেনকে শুধু যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে নয় মন্ত্রিসভা থেকেই বাদ দেওয়ার দাবি ছিল তাদের। অবশেষে ২৩ জুলাই তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে পদ্মা সেতুর মতো ব্যয়বহুল প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাগোষ্ঠীর অর্থের সংস্থানের সব বাধাই দূর হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করতে পারি। প্রকৃতপক্ষে এটাই হচ্ছে নতুন প্রেক্ষাপট। বিশ্বব্যাংক অর্থের জোগান দেবে না, সেটা জানার পর সরকার নিজেদের অর্থে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করাসহ একাধিক বিকল্প উৎসের কথা বলছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো উদ্দীপনা নিয়ে সেতু নির্মাণে উদারভাবে সহায়তার আহ্বান জানানোর পর তাতে ভালো সাড়াও মিলছিল। কিন্তু তারপরও অর্থমন্ত্রী একাধিকবার বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অর্থলাভের আশা সরকার পরিত্যাগ করেনি এবং সেটাই সেরা বিকল্প। বিশ্বব্যাংকের তরফেও ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, ঋণচুক্তি পুনরায় সম্পাদনের সুযোগ সীমিত হলেও সে সম্ভাবনা এখনও রয়ে গেছে। বাংলাদেশের আপামর জনগণ আশা করবে যে, এখন যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেটা তারা গ্রহণ করবে এবং দ্রুত সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর ব্যবস্থা হবে। সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা আছে। প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত। সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং তার প্রতি বিশ্বব্যাংককে এখন অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরুর ব্যবস্থা করতে হবে। জাপান সরকার এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং বাংলাদেশের অনুকূলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য তারা সক্রিয় হতে পারে বলে যে কথা শোনা গিয়েছে সে বিষয়েও সরকারকে তৎপর থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করব।
সরকারকে সার্বিক পরিস্থিতিও মূল্যায়ন করে দেখতে হবে। এত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ায় দেশের সুনাম অবশ্যই ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং তা যত দ্রুত পুষিয়ে নেওয়া যায় সে জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। প্রকল্পের কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করায় কোনো দ্বিধা করলে চলবে না। দাতারা বলছে বলেই নয় আমাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থেও এর আবশ্যকীয়তা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। বড় বড় আর্থ-সামাজিক প্রকল্পে প্রচুর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে উঠেছে এবং তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ প্রদানে ব্যর্থতার জন্য কখনও কখনও যে বড় ধরনের খেসারত দিতে হয় তার নজির হাতের কাছেই রয়ে গেল। এ ভুলের পুনরাবৃত্তি আর নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.