সরকারি উদ্যোগে খোলাবাজারে বিক্রি করুন-রমজান মাসে মূল্যবৃদ্ধি

রমজান মাসের শুরুতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। বিশেষভাবে ইফতার ও সেহিরর জন্য প্রয়োজনীয় ডাল, তেল, বেগুন, ছোলা, মুড়ি, লেবু, কলা, খেজুর, আপেলসহ অন্যান্য ফলের দাম রীতিমতো উদ্বেগজনক।


বেড়েছে কাঁচা মরিচ, শসা ও বিভিন্ন শাকসবজির দাম। শুধু চিনি ও পেঁয়াজের দাম বাড়েনি, এটাই স্বস্তি। রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সেগুলো যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবছর আগে থেকেই সরকার উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এবারও তার কমতি ছিল না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও কম হয়নি। এমনকি বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৪টি টিমও গঠন করেছে। তার পরও বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আশান্বিত হওয়ার মতো খবর নেই।
সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের আয় বাড়েনি, কিন্তু বাজরদর বেড়েই চলেছে। ফলে অনেক মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবার কেনাকাটা কম করে ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, অথবা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়।
সরকারিভাবে দ্রব্যমূল্য তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যারিফ কমিশনের বিদায়ী চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান কয়েক দিন আগে এক সেমিনারে বলেছেন, ভোজ্যতেল ও চিনি ছাড়া রমজান মাসে প্রয়োজনীয় সব পণ্যে ৫০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত মুনাফা করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এই অতিমুনাফা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এখন দেখতে হবে, খুচরা পর্যায়ে যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, তার পেছনের কারণগুলো কী? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এলাকায় চাঁদাবাজি, পরিবহনে পথে পথে চাঁদা আদায় ও পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধি অনেকাংশে দায়ী। সরকারের তদারকি টিম যদি শুধু দোকানে দোকানে হানা না দিয়ে এসব চাঁদাবাজি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তাহলেও অন্তত দাম কমে আসতে পারে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ও বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান কাজ। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
সরকারের একটি পরীক্ষিত উপায় হলো ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও চুরি-অপচয় বন্ধ করতে পারলে এই রোজায় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা কঠিন নয়।
আপাতত সরকারিভাবে বিভিন্ন এলাকায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা চালু করা দরকার। এসব দোকানে ভোজ্যতেল, ডাল, আলু থেকে শুরু করে এমনকি পেঁয়াজু, আলুর চপ, বুট ভাজা, মুড়ি, জিলাপি, হালিমসহ যাবতীয় ইফতারসামগ্রীও বিক্রি হতে পারে। কারণ, এগুলোর দামই অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যদি সরকারি ব্যবস্থায় নির্ধারিত দামে ইফতারসামগ্রী পাওয়া যায়, তাহলে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি করতে অন্য ব্যবসায়ীরাও বাধ্য হবেন। বাজার অর্থনীতিতে এ ধরনের জরুরি ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎসব-পার্বণে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে বিক্রি বাড়ান আর আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটতে সচেষ্ট থাকেন। তাঁদের এই অতিমুনাফা লাভের প্রবণতা বন্ধ করা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.