আশাবাদী অর্থমন্ত্রী-বিশ্বব্যাংক ফিরবে- সব শর্ত মেনে অপেক্ষায় সরকার

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের সব শর্তই পূরণ হলো। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়ার পরই সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অন্য যে দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের একজন অবসরে


গেছেন আগেই। সাবেক সেতু সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকেও পাঠানো হয়েছে ছুটিতে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংক যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির 'বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ' থাকার কথা বলেছিল, একে একে তাঁদের সবাইকেই সরানো হলো। তাই এবার পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থ নিয়ে ফিরে আসবে বলে আশা করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।
সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগের পর গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, 'বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত পূরণ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমি আশাবাদী, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। আমি আশাবাদী। যা কিছু হচ্ছে সবই দেখতে পাচ্ছেন। আরো দেখতে পাবেন।'
বিশ্বব্যাংকের দিক থেকে কোনো ইঙ্গিত পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'সেটা না হলে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছি কেন?'
বিদ্যুৎ সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, যে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল, তা অস্বাভাবিক। তারপরও আমরা তাদের সব শর্ত মেনে নিয়েছি। বিশ্বব্যাংক তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'অবশ্যই। অবশ্যই।'
সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, 'বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মা সেতুতে ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল, তা সচরাচর ঘটে না। এরপরও আমরা তাদের সব শর্ত মেনে নিয়েছি।'
সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিত্ব ছাড়ায় এবং একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা (মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া) ছুটিতে যাওয়ায় বিশ্বব্যাংক আবার পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার নতুন প্রেসিডেন্ট একিহিকো তানাকা ওয়াশিংটনে রয়েছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে জাইকা-প্রধান যাতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি আলোচনা করেন সেজন্য ফোন করে অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আর জাইকা-প্রধানকে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরির অংশ হিসেবে আবুল হোসেনের পদত্যাগ ও মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ছুটি দেওয়া হলো।
গত রবিবার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গোল্ডস্টেইনের (বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর) দেওয়া চারটি প্রস্তাবের মধ্যে চতুর্থটি (আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার) মেনে নেওয়া একটু অসুবিধা ছিল। আমরা চেষ্টা করছি, এটাও কিভাবে সমাধান করা যায়। তা-ই যদি হয়ে যায়, তাহলে শিগগিরই আমরা শুরু করতে পারি।' গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর সঙ্গে জড়িত হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের তখনকার পরিচালক রফিকুল ইসলামকেও সরিয়ে দিতে চাপ দেয় সংস্থাটি। তারপর আবুল হোসেনকে গত জানুয়ারি মাসে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে সেতু বিভাগের সচিব পদ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান করা হয়। আর রফিকুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা আর বাড়ায়নি সরকার। তবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি না দিয়ে আবুল হোসেন ও মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার দায়িত্বে রদবদল ভালোভাবে নেয়নি বিশ্বব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় চিঠি চালাচালির একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক গত ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে।
বিশ্বব্যাংক যেদিন ঋণচুক্তি বাতিল করে সেদিনই অর্থমন্ত্রণালয় সংস্থাটির কাছে একটি চিঠি পাঠায়। তাতে আবুল হোসেন বা কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে বলা হয়, আপত্তি থাকা তিনজনের মধ্যে একজন এরই মধ্যে অবসরে গেছেন। একজন ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আরেকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটু সময় লাগবে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এ সামাদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.