শেষ দেখা by ফেরদৌস আরা

ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে তাঁকে যখন দেখছি; তিনি শুয়ে আছেন বেডে। সারা শরীর জুড়ে লাগানো চিকিৎসার সব যন্ত্রপাতি। শাওন আমাকে জানাল, সকাল পর্যন্ত অবস্থা আরও খারাপ ছিল। যেখানে আগে একশ' ভাগ লাইফ সাপোর্ট লাগছিল, এখন তা চলি্লশে নেমে এসেছে।


শাওন ও মাজহারের মুখে এক ধরনের ভালো লাগার হাসি। রিকভারি করছেন আমাদের প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ।
ইচ্ছা ছিল তাকে দেখব। কিন্তু কেবিনে যাকে শুয়ে থাকতে দেখলাম তাকে আমার খুব অপরিচিতই মনে হচ্ছিল। মুখভর্তি সাদা সাদা দাড়ি। অনেকটা হাঁ করে বেহুঁশের মতো শুয়ে আছেন। ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। নিথর-নীরব; শুয়ে আছেন।
এই কি আমাদের হুমায়ূন আহমেদ! হাসিখুশি, প্রাণখোলা সেই মানুষ আমার সামনে!
পুরনো স্মৃতি ভেসে এলো।
আমার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয় সেই তরুণ বয়স থেকেই। তার লেখালেখির সুবাদে নয়; তার প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন ছিল আমার সহপাঠী, প্রিয় বান্ধবী। ওদের বিয়ে, বিয়ের পর আমেরিকায় চলে যাওয়া পর্যন্ত আমার সঙ্গে যোগাযোগটা ভালোই ছিল।
আমি আমেরিকায় গিয়েছিলাম এ মাসের শুরুতেই। সেখানে বঙ্গমেলায় আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে আমি বিভিন্ন রাজ্যে শোতে অংশ নিই। শেষে জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিই। ইচ্ছা ছিল বেলভ্যু হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদকে দেখে দেশে ফিরব। সেভাবেই ১৭ জুলাই আমি বেলভ্যু হাসপাতালে তাকে যখন দেখতে যাই, আমেরিকান সময় সন্ধ্যা ৭টা। হাসপাতালে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ছিলাম। সে সময় সেখানে ছিলেন তাঁর ছোট ভাই ড, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শাওনের মা, শাওন ও অন্যপ্রকাশের মাজহার।
শুনলাম প্রথম অপারেশন খুব সাকসেসফুল হয়েছিল। ১০ দিনের মাথায় তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেও গিয়েছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদকে দেখে সে রাতেই আমি নিউইয়র্ক থেকে ঢাকা রওনা হয়ে আসি। মাঝে মাত্র একটি দিন। আমি ১৯ জুলাই সকালে ঢাকায় পেঁৗছাই। বিমানপথে একটানা ভ্রমণের কারণে বিশ্রাম শেষে রাতে যখন টেলিভিশন দেখছি, এ সময় খবর পেলাম হুমায়ূন আহমেদ আর নেই।
আমি একি শুনলাম! যাকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টাও হলো না দেখে এলাম; শুনে এলাম, তিনি রিকভারি করছেন; সেখানে এই দুঃসংবাদ!
হুমায়ূন আহমেদ আমাদের বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা। তাকে হারিয়ে এক বিরাট শূন্যতায় পড়ল আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি। নন্দিত, জনপ্রিয় একজন মানুষ হুমায়ূন আহমেদ। তার সৃষ্টিকর্ম আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল।

No comments

Powered by Blogger.