রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ধ্বংস হবে সুন্দরবন

বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে সাময়িক বিরতি দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হলে ঝুঁকিতে পড়বে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আপত্তির পাশাপাশি রামসার কর্তৃপক্ষও উদ্বেগ জানিয়েছে।


তবে অনড় পিডিবি। ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কম্পানির (এনটিপিসি) সঙ্গে এ বিষয়ে পিডিবির ইতিমধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জায়গা ভরাটের জন্য পশুর নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে পর্যাপ্ত বালুর জোগান না দিতে পারায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আর এ কাজটি করতে গিয়ে সরকারের অন্তত চারটি দেশি-বিদেশি আইন ভাঙতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি নিয়ে স্থানীয় কৃষিজমির মালিকদের প্রবল বিরোধিতা রয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে উপকূলীয় দুর্যোগের প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন। একই সঙ্গে পৃথিবীর বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন হারিয়ে যাবে, মরে যাবে পশুর নদী, বাড়বে খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ততা।
পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১১ সালের ২৩ মে রামপালের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্রের অনুমোদন দেয়। ওই অনুমোদনপত্রে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্ণ সম্মতি ইআইএ-এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনো যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাবে না। পাশাপাশি জলাভূমিও ভরাট করা যাবে না। যদি এসব শর্ত ভঙ্গ করা হয়, তবে অবস্থানগত ছাড়পত্র বাতিলের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে মাসব্যাপী মাটি কেটে কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জায়গা ভরাট করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পিডিবি মাটি কাটার কাজ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রের দেওয়া শর্ত ভেঙেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মনোয়ার ইসলাম বলেন, 'আমি জানি সেখানে পিডিবি মাটি ভরাটের কাজ করছে।' তিনি বলেন, সারা দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি অনেক। বিদ্যুৎকেন্দ্র তো কোথাও না কোথাও স্থাপন করতেই হবে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ কাজ চলছে।' এ ক্ষেত্রে কি আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে- প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, 'অবস্থানগত ছাড়পত্রে কী কী শর্ত দেওয়া ছিল, তা দেখে বলতে হবে। আমি বিষয়টি জানি না।'
কবে নাগাদ ইআইএ পরিবেশের ছাড়পত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, 'পিডিবি আমাদের একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিয়েছে। আমরা প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করছি। খুব শিগগির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।'
আইনজ্ঞদের দাবি, পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্র বাতিল করে অবিলম্বে পিডিবির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পরিবেশ অধিদপ্তরের। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার তুহিন মালিক বলেন, পরিবেশের অবস্থানগত ছাড়পত্রের শর্ত ভেঙে কাজ করা অবশ্যই আইনের পরিপন্থী। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্ঞাতসারেই সেখানে পিডিবি কাজ করছে বলে এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক জানিয়েছেন। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মালিক বলেন, 'বিদ্যুতের ব্যাপারে কথা বলার অনেক লোক আছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ হলো পরিবেশ রক্ষা করা। তিনি তাঁর দপ্তরের স্বার্থ না দেখে চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করেছেন।'
সুন্দরবনের পাশে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত বছরের ২২ জুন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কান্তি মজুমদারকে চিঠি দিয়েছে রামসার। পাশাপাশি বন অধিদপ্তরের পক্ষে প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দীন আহমদ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর। চিঠিতে বলা হয়, 'কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার তথা সমগ্র জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশ রামসার কনজারভেশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার বাধ্যবাধকতার দিক থেকে আন্তর্জাতিকভাবেও আরো বেশি দায়িত্বশীল। ওই চিঠিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সুন্দরবনের পাশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। এটা দেশের অন্য কোথাও করা উচিত।'
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এর বাইরে কয়লা রাখার জন্য আরো ৬০০ একর জায়গা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিস সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ৮৩৪ একর জমির মধ্যে এক হাজার ৭০০ একর জমির মালিক এখনো ক্ষতিপূরণের অর্থ নেননি।
বিপজ্জনক শিল্প কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করে থাকেন বিপজ্জনক শিল্প হিসেবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, বিভিন্ন ক্ষুদ্র কণিকা, কার্বন মনো-অক্সাইড, মারকারি বা পারদ, আর্সেনিক, সীসা, ক্যাডমিয়ামসহ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান নির্গত হয়। আরেকটি সমস্যা- ছাই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পুড়ে ছাই হয় এবং কয়লা ধোয়ার পর পানির সঙ্গে মিশে তৈরি হয় আরেকটি বর্জ্য- তরল কয়লাবর্জ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় বর্জ্যই বিষাক্ত, কারণ এতে বিষাক্ত আর্সেনিক, মার্কারি বা পারদ, ক্রোমিয়াম এমনকি তেজষ্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম থাকে।
গত ৫ মে ২০১১ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে পরিবেশবিদদের একটি দল প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জায়গা পরিদর্শন করে। তারা নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ২৩ ধরনের ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে। এসব ক্ষতির মধ্যে রয়েছে- সুন্দরবনের স্বাভাবিক চরিত্র বিনষ্ট হবে, তৈরি হবে অসংখ্য কয়লাডিপো, শুরু হবে গাছ কাটা, বনে আগুন লাগানো, বাঘ, হরিণ ও কুমির ধরা।
কয়লাপোড়া সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি সুন্দরবনের জৈবিক পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বায়ুমণ্ডলের সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন যৌগ থেকে সৃষ্ট গ্রিন হাউস গ্যাস বনের জন্য অতি মারাত্মক ক্ষতিকর অ্যাসিড-বৃষ্টি ঘটাবে এবং তা শুধু সময়ের ব্যাপার।'
অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তারের ওই গবেষণা শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক করে বলা হয়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর পুরো কার্যক্রম শিগগিরই বন্ধ করা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সুন্দরবনের পাশে এ রকম একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তির আগে অবশ্যই বনের পরিবেশের বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার ছিল। তা না করে ভারতের সঙ্গে আগেই একটি চুক্তি সম্পাদন করা হলো, যা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।'
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল হলে হারিয়ে যাবে বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন। যে ডলফিন শুধু বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকার পশুর নদীতেই দেখা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের মংলা, চাঁদপাই ও শরণখোলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পশুর নদী ও এর চ্যানেলের শ্যাওলা নদীতে বিরল প্রজাতির ডলফিন গাঙ্গেয় ও ইরাবতীর বাস। ডলফিন সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধির স্বার্থে গত ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ওই অঞ্চলকে বন্য প্রাণী 'অভয়ারণ্য' হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের ডলফিন নিয়ে কাজ করছে ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডাব্লিউসিএস)। এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রচুর পরিমাণ ঠাণ্ডা পানির প্রয়োজন হবে, যা আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহারের পর বিভিন্ন দূষণকারী পদার্থ মিলে গরম হয়ে নদীতে ছাড়া হবে। এই বিপুল পরিমাণ দূষিত গরম পানি যখন পশুর নদীতে গিয়ে পড়বে, তখন নদীর ছোট-বড় উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর প্রাণধারণ কঠিন হয়ে যাবে, বিশেষ করে সরকার পশুর নদীর যে অংশটিতে ডলফিনের জন্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেই অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষিত গরম পানি পশুর নদীর ডলফিনের খাদ্য ও আবাসভূমি নষ্ট করে দেবে। এই বিরল প্রজাতির ডলফিনের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।'
বন ধ্বংসের পাশাপাশি কয়লাবিদ্যুতের কারণে পানির আধার ধ্বংসের কথা বলছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রচুর মিষ্টি পানির প্রয়োজন। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পানি আসবে সংলগ্ন পশুর নদী থেকে। এ জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারীদের লবণাক্তমুক্তকরণ প্লান্ট বসানোর প্রয়োজন পড়বে। পশুর নদী এমনিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এ নদী থেকে এই হারে পানি প্লান্টে টেনে নিলে সে ক্ষেত্রে নদীর ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সেচকাজ বিঘি্নত হবে। এই নদী সুন্দরবনের অনেকখানি অংশের জীবনপ্রবাহকে টিকিয়ে রেখেছে। নদীটি শুকিয়ে যেতে থাকলে মারা পড়বে সুন্দরবনের অসংখ্য প্রাণী। আর যদি মাটির নিচ থেকে মিষ্টি পানি তোলা হয়, তাহলে ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, এ রকম একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১৪৪ কিউসেক পানির প্রয়োজন হবে। এক হাজার ফুটের গভীর থেকে এত বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলনের কারণে লবণাক্ততার প্রভাব বেড়ে যাওয়া এই অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরের পানিতে লবণ পানি প্রবেশ করবে, যা মারাত্মক পরিবেশদূষণ ডেকে আনতে পারে।
পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম ইনামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পানিদূষণ দুই প্রকার হয়। প্রথমত, জেনারেটর ঠাণ্ডা রাখার জন্য মিষ্টি পানির প্রয়োজন হবে। রামপালের যেখানে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, সেখানে মিষ্টি পানি নেই। বিকল্প হিসেবে ভূ-গর্ভের পানি তোলা হলে পানির স্তরের পরিবর্তন ঘটবে। গভীর নলকূপ দিয়ে অতিরিক্ত পানি তোলার কারণে ওই সব অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তরেও নোনা পানির প্রবেশ ঘটবে, যা মারাত্মক পরিবেশদূষণ ঘটাবে। আর দ্বিতীয় দূষণ হলো, জেনারেটর ঠাণ্ডা করার জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেই পানি যখন ছেড়ে দেওয়া হবে, তা কিন্তু গরম পানি হয়ে বেরোবে। এই গরম পানি যেখানে যেখানে যাবে, এর প্রতিটি জায়গায় পরিবেশদূষণ করবে।'
বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন প্রভাবশালীদের মৎস্য ঘের : বর্ষা মৌসুম থাকার কারণে পিডিবি আপাতত এর কাজ বন্ধ রেখেছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া জায়গায় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে মৎস্য ঘের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিগ্রহণকৃত জমিতে থাকা সাধারণ মানুষের ১১৩টি চিংড়িঘের এখনো অক্ষত আছে। এই ঘেরগুলোই দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।
সুন্দরবন রক্ষা কমিটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক সুশান্ত দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, 'সাধারণ মানুষের যেসব জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তা এখন আওয়ামী লীগের নেতারা ভোগদখল করছেন। আমরা এসব জমি আগের মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।'
ভারতে বাতিল হওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে মরিয়া পিডিবি : ভারতে এনটিপিসি ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। ২০১০ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি ভারত বাতিল করে। মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুর জেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করতে চেয়েছিল এনটিপিসি।
অবশেষে হাইকোর্টের রুল : গত ২৭ জানুয়ারি দেশের ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যুক্ত বিবৃতিতে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.