নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু-গড়ে উঠুক জাতীয় ঐকমত্য

দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় এখন পদ্মা সেতু। একটি প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার যথার্থ অর্থেই বিব্রত। ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাহারের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের এই ঘোষণা হতাশ করেছে দেশের মানুষকে।


নির্বাচনী অঙ্গীকার শুধু নয়, দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নেও সরকারের সামনে এখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই।
পদ্মা সেতু সরকারকে নির্মাণ করতেই হবে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির জন্য এই সেতুর প্রয়োজনীয়তার কথা অনেক দিন আগে থেকেই বলা হচ্ছে। বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রকল্পটি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করায় যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে মঙ্গলবার একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে দেশীয় অর্থায়নে কাজ শুরু করার পাশাপাশি জাপানি সংস্থা জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের ইতিবাচক অবস্থান ধরে রেখে তাদের কাছ থেকে আরো বেশি ঋণ পাওয়া এবং মালয়েশিয়ার প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখা- বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের পর সরকার এখন এই তিনটি বিকল্প নিয়েও এগোচ্ছে। ওদিকে গত বুধবার জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় নতুন আশার আলো দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে বক্তৃতাকালে তিনি বলেছেন, 'পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ করব। প্রয়োজনে নিজেদের অর্থায়নে করব।' অর্থাৎ দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন তিনি। বিদেশি অর্থায়নের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, 'যে দেশই প্রস্তাব দিক, যা দেশের জন্য ভালো হবে, তা-ই করা হবে। পিপিপি অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে আমরা এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি। এতে দেশের টাকা লাগবে না। যে কম্পানি অর্থ বিনিয়োগ করবে, তারা সেতু পরিচালনা করবে এবং একটা সময় আমাদের কাছে সেতু হস্তান্তর করবে।' দেশীয় অর্থায়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অর্থ, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, 'কিভাবে অর্থায়ন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।' দেশের সামর্থ্য নিয়ে একটি আবেগের প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে তিনি বলেছেন, 'বাংলাদেশ কি সারা জীবন অন্যের সাহায্য নিয়েই চলবে? নিজের পায়ে দাঁড়াবে না? সেতু করার জন্য আমাদের ১৬ কোটি মানুষ আছে। ৮০ লাখ প্রবাসী আছে।' অর্থাৎ মানুষের ওপরই শেষ আস্থা তাঁর। অন্যদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন। দেশের বেসরকারি খাতের বীমা কম্পানিগুলো ১৬ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা লাইফ ফান্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তারা।
অর্থাৎ বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণ প্রস্তাব বা অর্থায়ন বন্ধ করলেও বাংলাদেশের কাছে এখন অনেক বিকল্প আছে। এর মধ্যে সেরা বিকল্প হতে পারে দেশের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ। সেই লক্ষ্যে সামনের দিকে এগোতে পারে সরকার। বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন যেমন অর্থ বিনিয়োগ করতে চেয়েছে, তেমনি আরো অনেক সংগঠনকে বিনিয়োগে প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। দেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেও প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।
পদ্মা সেতু এখন সরকারের নিজস্ব কোনো ইস্যু নয়। এর সঙ্গে দেশ ও জাতির আবেগ জড়িয়ে গেছে। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেশের মানুষের আবেগে আঘাত করা হয়েছে। এ আঘাতের জবাব দিতে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। পদ্মা সেতু প্রশ্নে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। দলমত ভুলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে জাতীয় স্বার্থে। আমরা আশা করব, দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে সরকার ও বিরোধী দল- সবাই গঠনমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।

No comments

Powered by Blogger.