মূল্যস্ফীতি আরও কমে এসেছে, জুনে দাঁড়িয়েছে ৮.৫৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও কমে এসেছে। তবে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরেই ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ।


এর আগের অর্থবছরের (২০১০-১১) গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যা সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার।
সেই লক্ষ্য পূরণ না হলেও অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মে মাসে এই হার ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং তার আগের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল। অর্থবছরের শেষ তিন মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের নিচে অবস্থান করছে।
গত বৃহস্পতিবার বিবিএস মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিদ্যুত, অবকাঠামো, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে গড় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, তবে প্রধানত চাল ও চাল জাতীয় দ্রব্য এবং অন্য খাদ্য সামগ্রীর মূল্য হ্রাসের কারণে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। মে মাসে এই হার ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি কমে জুনে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭২ শতাংশে, আগের মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম বলেন, গত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম উর্ধমুখী ছিল। দেশের মূল্যস্ফীতি হতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। তবে বিশ্ববাজারের উর্ধমুখী ধারা থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে খাদ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল আছে। আবার দেশেও কৃষি পণ্যের উৎপাদন ভাল। বড় কোন দুর্যোগ না হলে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতির এ হার হিসাব করা হয়েছে বলে মহাপরিচালক জানান। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মাসওয়ারী হিসেবে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) জুনে গ্রামের পাশাপাশি শহরেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জুনে তা ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমেছে।
গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ০২ শতাংশ হয়েছে। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
জুন মাসে শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের মাসে এ হার ছিল ১১ দশমিক ১২ শতাংশ।
শহরে জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মে মাসে এর হার ছিল ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মজুরি হারের তথ্যও প্রকাশ করা হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মজুরির হার বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। মে মাসে তা বেড়ে হয়েছিল ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিবিএস মহাপরিচালক বলেন, খাদ্যবহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার কারণ হলো কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এর মধ্যে রয়েছে পরিধেয় বস্ত্রাদি, চিকিৎসাসেবা খরচ, পরিবহন খাত এবং লন্ড্রি সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে গোলাম মোস্তফা কামাল দাবি করেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তার চেয়ে বেড়েছে। মজুরির হার বাড়ার কারণে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। যা অর্থনৈতিক উন্নতির নির্দেশক। অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ভাল। এটিও দেশের অর্থনীতির জন্য ভাল লক্ষণ।

No comments

Powered by Blogger.