কোচিং বন্ধ ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা by মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

শিক্ষক হলেন মানব গড়ার কারিগর। একটি দুর্র্নীতিমুক্ত, আদর্শ সমাজ গঠনে শিক্ষকরাই মোক্ষম ভূমিকা পালন করতে পারে। কুমার নরম মাটি দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে তার শিল্পকর্মে শৈল্পিক নৈপুণ্য ফুটিয়ে তোলে। সে যেভাবে চায় তার শিল্পকর্ম তৈরি হয় সেভাবে। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ওই নরম মাটির মতো।


আর শিক্ষক হলেন সেই কুমার। যার আদর-যত্ন আর ভালোবাসায় তারা হতে পারে পরিপূর্ণ মানুষ। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। অনাগত দিনে তারাই জাতির নেতৃত্ব দেবে। তাই এই নতুন প্রজন্মকে যদি আমরা নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান করে সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারি, তবেই আমরা পেতে পারি একটি সুন্দর সমাজ ও দেশ। ফলে আমাদের এই বিশাল জনসংখ্যা মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে। শিক্ষক সমাজই পারে এই অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে। সুতরাং সবার আগে আমাদের তাদের কথা ভাবতে হবে। সরকারকে ভাবতে হবে তাদের সমস্যার কথা। প্রতিটি কাজের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে ঐকান্তিকতা আর প্রচেষ্টার ওপর। মন থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করলে সেটা যত সহজে বাস্তবায়ন করা যায়, জোর করে চাপিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করা তত সহজ কাজ নয়। শিক্ষকদের সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সমস্যা নিরসনে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, যা জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে।
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু এ পেশাকে অবমাননা করে কিছু অর্থলোভী শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছিল। শিক্ষকের প্রতি সরকারের অবহেলা আর বঞ্চনা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমাজ বয়ে বেড়াচ্ছে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু আদর্শ দিয়ে জীবন চালানো যায় না। বাস্তবতার কাছে প্রতিনিয়ত তাদের পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই বিপর্যস্ত জীবন নিয়ে শিক্ষক সমাজ জাতিকে কী দিতে পারবে? যে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে অনেকে এ পেশায় এসেছেন তিনি নিজেকে জাতির সেবায় নিয়োজিত করবেন; সময়ের ব্যবধানে সে আদর্শকে বিকিয়ে দিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে নিজেও জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষা-বাণিজ্যে। এভাবে করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাইভেট টিউশনি একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করা গণমানুষের দাবিতে পরিণত হলো। সম্প্রতি সরকার শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সরকারের সময়োচিত এ সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি সরকার যদি শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামোর বিষয়টিকে সুরাহা করে আইনটি জারি করত, তাহলে বোধহয় বেশি ভালো হতো। শিক্ষক সমাজও সরকারের এ মহতী প্রচেষ্টাকে সানন্দে গ্রহণ করত। ফলে শিক্ষক সমাজ ও সরকারের সমন্বয় আমরা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে অগ্রগামী হতে পারতাম। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীও বারবার জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা শিক্ষক সমাজ সবসময়ই প্রত্যাশা করি আগামী সুন্দর ভবিষ্যতের। আমরা চাই সামাজিক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন। যাতে আমরা বাংলাদেশকে একটি আদর্শ, বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারি। নীতি-নৈতিকতা আমাদের পরম শিক্ষা। শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে সুন্দর সমাজের চিন্তা করা বোকামি বৈ আর কিছুই নয়।
আমরা শিক্ষক সমাজ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মুষ্টিমেয় কয়েকজন অর্থলোভীর কারণে গোটা শিক্ষক সমাজ কলঙ্কিত হতে পারে না। অনতিবিলম্বে সরকারের উচিত শিক্ষকদের বঞ্চনার কথা বিবেচনা করে আলাদা বেতন কাঠামোর ঘোষণা দেওয়া। আমরা চাই না গাইডবই নিষিদ্ধ আইন ও ধূমপান আইনের মতো প্রাইভেট টিউশনি বন্ধের আইনটিও কাগুজে আইনে পরিণত হোক। আমরা চাই আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
য় শিক্ষক, পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পিরোজপুর
mijanur.rahaman90@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.