নীল জলাশয়ের লাল শাপলা

কাপ্তাই পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন জলাশয়ে শান্ত শীতল নীল জলের লাল শাপলা ফুল ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং নানবিধ কীটনাশক প্রয়োগের ফলে জাতীয় ফুল শাপলা এখন বিলুপ্তপ্রায়। কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন জলাশয় বিশেষ করে কাপ্তাই লেক।


কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের বিভিন্ন পুকুর ও আবদ্ধ জলাশয় এবং স্থানীয় খাল-বিল ও ফসলী জমির জলাশয়ে একসময় ব্যাপকভাবে শাপলা ফুল দেখা যেত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ শাপলা উৎপাদন ছিল ব্যাপক। কিন্তু এখন ভরা বর্ষা মৌসুম হলেও সম্প্রতি কাপ্তাইয়ের কোন জলাশয়ে শাপলা ফুল চোখেই পড়ে না। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও শাপলার অস্তিত্ব পাওয়া অনেকটা দুষ্কর।
এ প্রসঙ্গে কাপ্তাইয়ের ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী থোয়াইচিং মারমা জানান, বর্ষার শুরু থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত চিৎমরম ইউনিয়নের বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে হাজার হাজার শাপলা ফুল জন্মাত। সকাল বেলা জলাশয়ের দিকে চোখ পড়লেই শত শত শাপলা ফুল দেখে হৃদয় জুড়িয়ে যেত। এই অঞ্চলের উপজাতি জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় ছিল শাপলা ফুল। কিন্তু এখন এ অঞ্চলে শাপলা ফুলের অস্তিত্ব পাওয়া অনেক দূরহ হয়ে পড়েছে। প্রকৌশলী থোয়াইচিং মারমা আরও জানান, জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত বিরূপ প্রভাব এবং বিভিন্ন ফসলী জমি ও জলাশয়ে মাত্রতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করার ফলে এখন জলাশয়ে আর শাপলা ফুল জন্ম নেয় না।
কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনুর রশীদ জানান, শাপলা ফুল সবজি জাতীয় খাদ্য উপকরণের পাশাপাশি লাল শাপলা ফুলের ঔষধী গুণও বিদ্যমান। লাল ও সাদা শাপলা খুবই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম আছে। লাল শাপলা এ্যলার্জি ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়া শাপলার মাটির নিচের মূল অংশ তথা শালুক তুলে খাওয়া যায়। বর্তমানে এই শাপলা-শালুক এখন আর জলাশয়ে দেখাই যায় না।
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী ডিগ্রী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা মনোয়ারা বেগম জানান, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। আগামী প্রজন্মকে হয়ত ছবি দেখেই জাতীয় ফুল শাপলা চিহ্নিত করতে হবে। বাস্তবে এই শাপলা দেখার সুযোগ পাবে না আগামী দিনের শিশুরা। এই অবস্থায় আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে শাপলা ফুলের বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে জাতীয় ফুল শাপলাকে।
Ñএমএ কোরেশী শেলু, কাপ্তাই

No comments

Powered by Blogger.