আঙ্কটাডের বিনিয়োগ প্রতিবেদন-বিদেশি বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলার ছাড়াল

বাংলাদেশে বার্ষিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আবার ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১১৩ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার। জাতিসংঘের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১২-এ এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।


গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী একযোগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে ৯১ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। সে হিসাবে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ।
এর আগে ২০০৮ সালে প্রথমবার বার্ষিক বিদেশি বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল। সেবার এসেছিল ১০৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ। এরপর ২০০৯ সালে ৭০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আসে।
তবে গত বছর নতুন বিনিয়োগ তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। মূলত ব্যবসারত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পুনর্বিনিয়োগ এবং আন্তপ্রতিষ্ঠান ঋণ বেশি হওয়ায় মোট বিদেশি বিনিয়োগ শত কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশে বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটির মূল দিকগুলো তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম ইসমাইল হোসেন। এ সময় বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিনিয়োগ বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল।
ইসমাইল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগ ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ বিনিয়োগ গেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে।
বাংলাদেশে গত বছরের বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহজনক উল্লেখ করে ইসমাইল হোসেন বিনিয়োগধারা অব্যাহত রাখতে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নীতির স্থায়িত্ব ধরে রাখার সুপারিশ করেন।
এস এ সামাদ বলেন, দেশের অবকাঠামোর উন্নয়নসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারলে বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে আইনকানুন ঘন ঘন পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বিনিয়োগের সমস্যা বাড়ে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। কিন্তু অনেকেই তা চায় না।
প্রতিবেদনে মোট বিনিয়োগকে তিন ভাগে ভাগ করে দেখানো হয়। গ্রিন ফিল্ড বা নতুন বিনিয়োগ হিসেবে গত বছর এসেছে ৪৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার, যা ২০১০ সালে ছিল ৫২ কোটি ডলার। আগে যেসব কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে, তার লভ্যাংশ পুনর্বিনিয়োগ থেকে গত বছর এসেছে প্রায় ৪৭ কোটি ডলার, যা ২০১০ সালে ছিল সাড়ে ৩৬ কোটি ডলার। আর বিনিয়োগকৃত কোম্পানি তার মূল কোম্পানি থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে সাড়ে ২১ কোটি ডলার, যা ২০১০ সালে ছিল মাত্র দুই কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
মোট বিনিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বস্ত্র খাতে, যার পরিমাণ ২৭ কোটি ২৪ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ২৪ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ২৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৮ কোটি ডলার এবং সিমেন্ট খাতে পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ডলার।
আঙ্কটাডের হিসাবে, ২০১১ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে মিসর। দেশটির মোট বিনিয়োগ ১৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার। পরের অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ১১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে মোট বিনিয়োগ হয়েছে তিন হাজার ১৫৫ কোটি ডলার। এ ছাড়া পাকিস্তানে ১৩২ কোটি সাত লাখ ডলার, মালদ্বীপে ২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ৩০ কোটি ডলার এবং নেপালে নয় কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে।
সার্বিকভাবে ২০১১ সালে বিশ্বে মোট বিনিয়োগ বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এ সময়ে বিশ্বে মোট বিনিয়োগ হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৪ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, ২২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনে বিনিয়োগ হয়েছে ১২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

No comments

Powered by Blogger.