নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা প্রয়োজন

বোরো চাষে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষক। সামনে তাঁদের বিশাল স্বপ্ন। বাজার বাড়ন্ত, সেই হিসাবও কষছেন তাঁরা। নিজের খাদ্যচাহিদা পূরণের বিষয়টি তো আছেই। স্বপ্ন পূরণের জন্য সবার আগে চাই জমি চাষ। আর তার জন্য প্রয়োজন জমিতে সেচ দেওয়া। কিন্তু সেই সেচ চালাতে গিয়েই হোঁচট খাচ্ছেন বারবার। বিদ্যুৎ নেই আগের মতোই।


বিদ্যুৎ সমস্যার কথা জানা ছিল আগে থেকেই। বিকল্প সেচ সুবিধার বিষয়ে তাই মানসিক প্রস্তুতি ছিল। ভেবেছিলেন, বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলা করবেন ডিজেল দিয়ে। সেচযন্ত্রগুলোতে তাই বিদ্যুতের সংযোগ থাকুক কিংবা নাইবা থাকুক, চালিয়ে নিতে পারবেন কোনোমতে। সামগ্রিক চিত্র চিন্তা করলেও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে পুরো দেশের বোরো চাষাবাদ বিকল হয়ে যাওয়ার কথা নয়। মাত্র ২৫ ভাগ সেচ চলে বিদ্যুতে। কিন্তু বাস্তবতা প্রতিকূলে গেল বিভিন্নভাবে। বিদ্যুতের ভেল্কিবাজির পাশাপাশি জ্বালানি তেলও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে কৃষকের। সরকার নির্ধারিত মূল্যেরও অনেক বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ডিজেল। ডিজেলের ড্রাম নিয়ে ডিলারের কাছে গিয়ে কৃষক জানতে পারলেন, লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা দরের ডিজেল কিনতে হবে ৬০ টাকায়। কেন এই বাড়তি মূল্য? উছিলার অভাব নেই বিক্রেতার। খুচরা বিক্রেতাদের কথা, কিনে আনতে হয় বাড়তি মূল্যে, বিক্রি করব কিভাবে কম দামে? তাদের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে দায়টা নিতে হবে সরকারকে। যাঁরা জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন, যাঁরা দেখভালের দায়িত্বে আছেন, তাঁদেরই তো নিতে হবে সেই দায়। কি বলছেন তাঁরা? কৃষিসচিব যখন বলেন সমস্যা কেটে যাবে, তখনো কৃষকের ভাবনার কমতি হয় না। আশ্বস্ত হওয়ার কথাও নয় তাঁদের। কারণ, ভরা সেচ মৌসুমেও বলতে শোনা যায়_প্রতিবেশী দেশে জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে জ্বালানি তেল পাচার হয়ে যেতে পারে। কোন কারণে চাহিদা অনুযায়ী তেল যাচ্ছে না কৃষকের কাছে? এর সন্তোষজনক জবাব দেবে কে? কৃষক এখন 'হবে' কিংবা 'হয়ে যাবে'_এমন শব্দ শুনতে নারাজ। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত। বিশ্বকাপে আলোর মহানগরী যেমন তাঁরা চান, তেমনি রাত জেগে জেগে নিজের জমিতে সেচ দেওয়ার সুযোগও তাঁরা চান। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন অতি দ্রুত বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষকের জমিতে সেচ দেওয়ার সুযোগ বাড়ানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডিজেল সরবরাহ করতে হবে। নাব্যতা কমে গেছে বলে কার্গো আটকে আছে, এমন যুক্তি শোনার সুযোগ নেই এখন। কার্গোতে করে তেল পরিবহন করতে অসুবিধা হলে তা অতি দ্রুত সড়কপথে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তথা খাদ্য উৎপাদনে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা সম্প্রসারিত না করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভাবাও যায় না। আর প্রতিবেশী দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বেশি_এমন অজুহাত খাড়া করানোর মতো ছেলেভুলানো কোনো যুক্তি শোনার এখন সময় নেই কৃষকের।

No comments

Powered by Blogger.