বাঁকখালীর বাঁক দখল-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কেন ধ্বংস করা?

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের খ্যাতি জগৎজুড়ে। একসময়ে শীতকালেই এ সুন্দর শহরে ভিড় জমাত ভ্রমণপিপাসুরা। এখন শীত-বর্ষা-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই নানা বয়সের পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও জেলার আরও অনেক স্থানের প্রতি রয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ। এর একটি হচ্ছে বাঁকখালী নদী।


কিন্তু বুধবার সমকালে 'বাঁকখালীতে ৫০০ একর জমি ৪২ প্রভাবশালীর দখলে' শিরোনামের খবর থেকে শঙ্কা জাগে, এককালের খরস্রোতা এ নদী কিছুদিনের মধ্যেই না ভরাট হয়ে পুরোপুরি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। পাহাড় কাটা, বর্জ্য ফেলা ও অন্যান্য কারণে নদীটি এরই মধ্যে নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকও স্বীকার করেছেন, অনেক স্থানে জেগে ওঠা চর ও ভরাট হওয়া তীর দখল হয়ে গেছে। তবে বাঁকখালীর দুই তীর অবিলম্বে দখলমুক্ত করা হবে, এমন সংকল্প রয়েছে তার। আমরা আশা করব, অনতিবিলম্বে চিংড়ি ঘের ও লবণমাঠ তৈরি এবং অন্যান্য উপায়ে দখল হয়ে যাওয়া জমি জেলা প্রশাসন উদ্ধার করতে সফল হবে। এ জন্য আইনের অভাব রয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু মামলা-মোকদ্দমা থাকতেই পারে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশকে হাত করেই কার্যসিদ্ধি করে থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের স্থানীয় নেতাদের একটি অংশের পৃষ্ঠপোষকতা পেতেও তৎপর থাকে দখলদাররা। পর্যটক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজার এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে আবাসনের চাহিদা বেড়ে চলেছে এবং তা পূরণে বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিনষ্ট করে কিংবা তার চূড়ান্ত ধ্বংসের বীজ বপন করে এ ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলার অর্থ হচ্ছে, সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকেই দ্রুত লাভের আশায় হত্যা করে ফেলা। দেশের অপর সমুদ্রসৈকত এলাকা কুয়াকাটায়ও চলছে এ ধরনের দখলদারি। প্রকৃতির অকৃপণ দানে ধন্য কুয়াকাটায় অর্ধশতাধিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ঘূমিগ্রাসে মত্ত হয়ে উঠেছে। এ ধরনের অপকর্মে স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা থাকে এবং কুয়াকাটায়ও তা রয়েছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো তাদের সহজেই ম্যানেজ করতে পারছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা সরকারি খাসজমি নিজেদের মালিকানায় দেখিয়ে সংবাদপত্র ও বেতার-টেলিভিশনে স্বপ্নের আবাসনের হাতছানি দিয়ে নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগ করা হলে কী বিপুল অঙ্কের লাভ ঘরে উঠে আসবে, তেমন স্বপ্নও দেখানো হয়। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন আবাসন ব্যবসায়ীদের কাজ শুরুর আগে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করায় নতুন নির্দেশ গেছে : জমির অনাপত্তি নেওয়া অংশেই কেবল আবাসন প্রকল্পের কাজ চালানো যাবে। এ ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোর অর্থ হচ্ছে ভূমিদস্যুদের আরও বেপরোয়া হতে উৎসাহ দেওয়া। বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রেও এমন নির্দেশ যেতে পারে, যাতে গণমাধ্যমকে অবশ্যই প্রকল্প এলাকার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি দেখাতে হবে। শুধু কুয়াকাটা ও কক্সবাজার নয়, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকার জন্যও এ ধরনের সরকারি অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা উচিত। এতে প্রতারণার মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে, সরকারি-বেসরকারি ভূমি নিরাপদ হবে এবং রক্ষা পাবে প্রকৃতি।
 

No comments

Powered by Blogger.