রেলের নিয়োগে কেলেঙ্কারি-মন্ত্রণালয়ের তদন্তে সাবেক জিএম মৃধাসহ দায়ী ৫ by একরামুল হক

রেলের ২৫টি ক্যাটাগরির সাম্প্রতিক নিয়োগে রেল মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। তদন্ত কমিটি এ জন্য পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধাসহ পাঁচজনকে দায়ী করেছে। বাকিরা হলেন: পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, জ্যেষ্ঠ কল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, চিফ কমান্ড্যান্ট আমিনুর রশিদ ও সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ আহমেদ।


কমিটি গত বৃহস্পতিবার রেলসচিব ফজলে কবিরের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) মো. শাহজাহান। অন্য দুই সদস্য হলেন রেল মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শফিকুল ইসলাম ও রেলের পরিচালক (সংস্থাপন) মো. ইব্রাহিম খলিল।
মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি এর আগে দেওয়া রেলের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত রেলের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্য নেন। মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ইউসুফ আলী মৃধার মেয়েজামাই ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (ঢাকা) আরমান হোসেন ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম) আবিদুর রহমানকে আংশিকভাবে দায়ী করা হয়। রেলের গঠিত তদন্ত কমিটি অন্যদের সঙ্গে এ দুজনকে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির সদস্য মো. ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেলের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা পর্যালোচনা করেছি। ওই প্রতিবেদন আমাদের কাছে যথার্থ ও সঠিক মনে হয়েছে। কারণ তাঁরা নিয়োগসংক্রান্ত প্রায় প্রতিটি অনিয়মের দালিলিক প্রমাণ তদন্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করেছেন, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেই আলোকেই আমরাও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করেছি।’
মো. ইব্রাহিম খলিল আরও বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ওই দিন আপনাদের কাগজে (প্রথম আলো) টেবুলেশন শিট জালিয়াতির চেষ্টার একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আমরা প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রথম আলোর ওই তথ্যও সংযুক্ত করেছি, যা জালিয়াতির গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’
টেবুলেশন শিট পরিবর্তন করে পরীক্ষকদের সই নিতে গত বুধবার চট্টগ্রাম কলেজে গিয়েছিলেন দুই তদন্তে অভিযুক্ত জ্যেষ্ঠ কল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া। পরদিন বৃহস্পতিবার কিবরিয়ার ছবিসহ প্রথম আলোয় তা প্রকাশিত হয়।
জানতে চাইলে যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও আরেকটি কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই। প্রতিবেদন আমার হাতে আসুক। তারপর দেখা যাবে।’
দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ইউসুফ আলী মৃধার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে অন্যতম অভিযুক্ত পূর্বাঞ্চলের জ্যেষ্ঠ কল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুটি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সুতরাং আমি দোষী নাকি নির্দোষ তা আপনি কীভাবে বলবেন? আর এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
প্রসঙ্গত, রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক (যান্ত্রিক) মো. শামছুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন রেলের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ইউসুফ আলী মৃধাকে ২৫টি ক্যাটাগরির নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের জন্য দায়ী করেছিল। হাফিজুর রহমানকে দুটি ক্যাটাগরির নিয়োগে সরাসরি এবং সাতটিতে আংশিক, গোলাম কিবরিয়াকে ১১টি ক্যাটাগরিতে এবং আরমান হোসেন, আবিদুর রহমান, আমিনুর রশিদ ও আবু সাইদ আহমদেকে একটি করে ক্যাটাগরির নিয়োগে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে।
ঢাকায় মধ্যরাতের ৭০ লাখ টাকা কেলেঙ্কারির সময় সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের সঙ্গে ছিলেন এই ইউসুফ আলী মৃধা। এরপরই রেলে নিয়োগসংক্রান্ত জালিয়াতির খবর ফাঁস হয়। পরে মন্ত্রণালয় ও রেল কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত ২২ মে রেলের মহাপরিচালকের কাছে মো. শামছুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের কমিটি ৫০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এবার প্রতিবেদন দিল মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি।

No comments

Powered by Blogger.