শুধু চাকরি দেওয়াই যথেষ্ট নয়-চরমপন্থীদের ফিরিয়ে আনতে হবে

চরমপন্থীরা একসময় বিপ্লবী আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। কিন্তু কালক্রমে তাঁরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। যদিও তাঁরা দাবি করতে থাকেন যে আদর্শের জন্য, বিপ্লবের জন্যই তাঁরা খুনখারাবি বা ডাকাতি করেন। কিন্তু মানুষ মেরে মানুষের কল্যাণ হয় না, এ কথাটা তাঁদের অনেকে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেন।


তাঁদের অনেকে চরমপন্থী দল থেকে বেরিয়ে আসার ইচ্ছাও পোষণ করেন। এ রকম অবস্থায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে চরমপন্থী নেতা-কর্মীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে প্রায় পৌনে তিন হাজার চরমপন্থীকে আত্মসমর্পণের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। সমাজে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে আনসারে নিয়োগ পাওয়া ৭৬৫ জনের মধ্যে অনেকে নানা অপরাধমূলক তৎপরতায় লিপ্ত হন। দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী পালিয়ে গিয়ে আবার চরমপন্থী দলে যোগ দেন। তাঁরা এখন কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা প্রভৃতি এলাকায় তৎপর।
২০ জুলাই পাবনার বেড়া উপজেলার দুর্গম চর এলাকায় হামলা চালিয়ে চরমপন্থীরা তিন পুলিশসহ চারজনকে হত্যা করেন। জুলাই মাসে মেহেরপুরে চরমপন্থীদের হাতে পাঁচজন খুন হন। সেখানে খুনাখুনি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। চরমপন্থীরা ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ যাবতীয় অপতৎপরতায় লিপ্ত। পুলিশ চিরুনি অভিযান চালিয়ে এলাকার সন্দেহভাজন যুবকদের ধরছে, অভিযুক্ত চরমপন্থীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে। কিন্তু চরমপন্থীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে এটা যথেষ্ট কি না, তা ভেবে দেখতে হবে।
অনেক দেশে এ ধরনের চরম পন্থা মোকাবিলায় গৃহীত রাজনৈতিক কৌশলগত পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হয়। আমাদের দেশেও সেটা সম্ভব ছিল। কিন্তু গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। একদিকে তারা চাকরিতে গিয়ে স্বস্তি পায়নি, তাদের সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত করা হতো; অন্যদিকে পুরোনো দলের নেতারা প্রতিশোধ হিসেবে দলত্যাগীদের খুন করার চেষ্টা করত। সে ব্যাপারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ অবস্থায় চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, পাশাপাশি দেখতে হবে রাজনৈতিক বিবেচনায় আবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কোনো সুযোগ আছে কি না। যদি কিছু সম্ভাবনা থাকে, তা কাজে লাগানো হোক। সে ক্ষেত্রে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমত, খুনের মতো মারাত্মক অপরাধের জন্য বিচার এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক বিবেচনায় আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হলে পুনর্বাসনের পূর্ণ নিশ্চয়তাসহই যেন তা করা হয়। শুধু চাকরি যথেষ্ট নয়, মর্যাদা ও নিরাপত্তাও বড় ব্যাপার।

No comments

Powered by Blogger.