কানাডায় নাইকোর দণ্ড-ব্যবসায়ে নীতিহীনতার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা

কানাডার তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি নাইকো রিসোর্সেস স্বদেশে দণ্ডিত হয়েছে বাংলাদেশের সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে। তাদের ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানিটির সম্পদ ও ব্যবসার তুলনায় এ পরিমাণ সামান্য।


তবে বিষয়টিকে দেখা হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রোধের দৃষ্টিকোণ থেকে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কানাডীয় আদালতের প্রধান বিচারক স্কট ব্রুকারের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার জন্য অর্থ ও সেবা প্রদান করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে, এটা কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি অবমাননার এবং সব কানাডীয়র জন্য বিব্রতকর। নাইকোর পক্ষ থেকে অন্যায় স্বীকার করে বলা হয়, এর দায়িত্ব কোম্পানি গ্রহণ করে নিচ্ছে। নাইকোর পক্ষ থেকে বিষয়টিকে 'ব্যবসা করার ব্যয়' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হলেও আদালত তা গ্রহণ করেননি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কানাডার প্রেসিডেন্ট জেমস কটজের মন্তব্যও বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। তিনি বলেছেন, আদালতের রায়ের পর কোম্পানিগুলো যেন আর না ভাবে যে অন্যায় করলে পার পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ২০০৫ সালের এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট সরকারের আমলের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন মন্ত্রিত্ব হারানো এবং নাইকোর দেওয়া গাড়িটি ফেরত প্রদানে বাধ্য হলেও তাকে এ জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। কানাডীয় আদালতের রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কানাডার মতো গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের প্রতি অনুগত একটি দেশের আদালত উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া তাদের নিজস্ব কোম্পানিকে শাস্তি প্রদান করবে, এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। এ মামলায় এ কে এম মোশাররফ হোসেনের নাম স্পষ্টভাবে এসেছে সুবিধাভোগী পক্ষ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে আরও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হচ্ছে, তিনি সুবিধা নিয়েছেন টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের জন্য ক্ষতিপূরণ ইস্যুতে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নাইকোর স্বার্থ রক্ষার জন্য। আমাদের নিজস্ব আইনে এ অপরাধের মাত্রা গুরুতর বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। কানাডীয় আদালতের রায়ের পর দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে, এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তদুপরি, তার বিরুদ্ধে ফেনী ও টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগও রয়েছে। তবে এ ধরনের মামলা দায়ের ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ ইস্যু যেন সামনে আনা না হয়। সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বর্তমানে তারা রয়েছে বিরোধী দলে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিন্ন দেশের একটি আদালতে প্রমাণিত হয়েছে এবং এতে দেখা যায় যে, তিনি ওই কোম্পানিকে সুবিধা দিতে গিয়ে দেশের স্বার্থহানি করেছেন। এ ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে সেটা রাজনৈতিক হয়রানির বিষয় বলে গণ্য হওয়া উচিত নয়। তেল-গ্যাস কিংবা অন্য যে কোনো ইস্যুতে বিদেশের সঙ্গে যে কোনো চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এ অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা সবাই স্মরণে রাখবে, এটাও প্রত্যাশিত। কথায় বলে, অপরাধের প্রমাণ থেকেই যায়। কোত্থেকে সেটা ফাঁস হবে, তা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে কেউ জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবেন না।
 

No comments

Powered by Blogger.