বিশেষ সাক্ষাৎকার-নারীকে নিজের জীবনের মূল্য উপলব্ধি করতে হবে by সুলতানা কামাল

সুলতানা কামালের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫০ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি সেখানে আইন বিষয়ে পড়েন এবং ১৯৭৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।


১৯৮১ সালে হল্যান্ড থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার পর তিনি কিছু সময় শিক্ষকতা ও কিছু সময় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনে আইনি পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
সুলতানা কামাল স্বাধীনতাযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা।
২০০৬ সালে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে এক মাসের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর সুলতানা কামাল পদত্যাগ করেন।
বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে সুলতানা কামালের নেতৃত্বে। তিনি এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম

প্রথম আলো  ইভ টিজিং এ দেশে সব সময়ই কমবেশি ছিল। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, এর প্রবণতা বেড়েছে। সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো লক্ষ করলে মনে প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ করে কেন একের পর এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে, ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে কয়েকজন মেয়ে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। বিষয়টা কী? কেন এসব ঘটছে?
সুলতানা কামাল  প্রথমে একটু বলে নিই, আমরা ইভ টিজিং শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না। কারণ, ইভ টিজিংয়ের মধ্যে একটা হালকা ভাব আছে; মনে হয়, এটা গুরুতর কোনো বিষয় নয়, সামান্য খুনসুটির মতো ব্যাপার আছে। কিন্তু আসলে এটা কোনো হালকা ব্যাপার নয়, মেয়েদের জন্য এটা একটা গুরুতর বিষয়, এটা নারী নির্যাতনেরই একটা বিশেষ ধরন। আমরা এটাকে বলছি নারীদের উত্ত্যক্তকরণ। এর চেয়ে ভালো শব্দ এখনো আমরা পাইনি। যা-ই হোক, যে প্রশ্নটি এসেছে, উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়ে কেন একের পর এক মেয়ে আত্মহত্যা করছে, আগে তো এ রকম খুব একটা হয়নি। একজন মেয়ে যে উত্ত্যক্তকরণের প্রতিবাদ জানানোর জন্য মিটিং-মিছিল করল, সেও একসময় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলো। কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রথম আলো  এ প্রশ্নটাই তো অনেকের মনকে এখন আলোড়িত করছে।
সুলতানা কামাল  এ প্রশ্নের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত আছে। নারী আন্দোলনের একটা বড় উদ্দেশ্য ছিল নীরবতা ভঙ্গ করা। আগে যে নারীদের উত্ত্যক্ত করা হতো না, তা কিন্তু নয়। ধরুন, বালিকা বা তরুণী বয়সে আমরাও কি উত্ত্যক্তকরণের শিকার হইনি? হয়েছি। কেউ কেউ যারা ব্যতিক্রমী ছিলাম, হয়তো কখনো কখনো প্রতিবাদ করেছি, নীরবে সব মেনে নিইনি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিকভাবে নারীদের মনে একটা ধারণা বসিয়ে দেওয়া হতো। সেটা এ রকম—যখনই তুমি ‘নিয়ম ভাঙছ’ তখন সেই ‘নিয়ম ভাঙা’র দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে; এর কষ্ট, বিপদ, বিড়ম্বনাগুলো তোমাকে সহ্য করতে হবে। তখন আমাদের প্রণোদনাটা কী ছিল? সেটা ছিল এ রকম—কোনো রকমে অর্গলটা ভেঙে আমরা বাইরে যাই, বাইরে যেতে হলে যা যা কষ্ট স্বীকার করতে হয়, আমরা করে নেব। ক্রমেই মেয়েরা কিন্তু শিখছে যে এটা সহ্য করার বিষয় নয়, মুখ বুজে মেনে নেওয়ার বিষয় নয়। অতএব, এই নীরবতা ভাঙার বিষয়টা এখন সামনে চলে এসেছে এবং মেয়েরা এখন প্রতিবাদ করছে। সে কারণেই সাংঘর্ষিক একটা ব্যাপার চলে এসেছে এবং ধীরে ধীরে তার তীব্রতা বেড়েছে। ফলে এসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সব ঘটনারই একটা প্রকট রূপ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আগে কী দেখেছি—একটু তাকিয়ে থেকেছে, শিস দিয়েছে, একটু মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? ওড়না ধরে টান দিচ্ছে, পথ আটকাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে, দলবেঁধে আসছে; যারা মেয়েদের রক্ষা করার জন্য আসছে, তাদের ওপরও আক্রমণ করছে। কিন্তু মেয়েরা এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছে, সামনে এগিয়ে যেতে চাইছে, তারা নীরব থাকতে, নিষ্ক্রিয়ভাবে সব সহ্য করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
প্রথম আলো  কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো প্রতিবাদী মেয়েদেরও নাজুকতা কমছে না, বরং তারা শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ বা লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারছে না, আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
সুলতানা কামাল  সেটা হচ্ছে এ কারণে যে মেয়েরা যেভাবে সচেতন ও প্রতিবাদী হয়েছে, যেভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, সামাজিক পরিবেশ বা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের চিন্তাধারা ঠিক সেই ধাপে এগোয়নি। যখনই একজন নারী তার ওপর অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানাতে যাচ্ছে, সেটার যে পাল্টা প্রতিঘাত তার ওপর আসছে, সেটার মাত্রার ওপর কিন্তু নির্ভর করছে, সে সেই প্রতিঘাতটা কতখানি মোকাবিলা করতে পারছে। এখানে তার পরিবারের সমর্থন প্রয়োজন, তার সামাজিক সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু এই সমর্থনগুলো সে পাচ্ছে না। তাই এখন পর্যন্ত নারীর মনে সেই ভাবনাটা কাজ করে যে আমার এই প্রতিবাদের দায়দায়িত্বটা শেষ পর্যন্ত আমাকেই বহন করতে হবে। উত্ত্যক্ত হয়েছে বলে, প্রতিবাদ করেছে বলে তার পরিবারকে লজ্জিত হতে হচ্ছে, মা-বাবাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে, সমাজে মুখ দেখাতে পারছে না—তখন কিন্তু সে শেষ উপায় হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রথম আলো  পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বিষয়টিও তো জরুরি। মেয়েরা পথেঘাটে উত্ত্যক্তকরণের শিকার হলে, স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধাগ্রস্ত হলে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথাও এসে যায়। সাধারণভাবে যেমন বলা হয়, পথেঘাটে নারীদের উত্ত্যক্তকরণ একটা সামাজিক ব্যাধি বা বিকৃত মানসিকতা, বিষয়টা তো শুধু তাই-ই নয়। বাংলাদেশের প্রচলিত দণ্ডবিধি অনুযায়ী এটা ফৌজদারি অপরাধও বটে। কিন্তু এই ফৌজদারি অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে শৈথিল্য দেখা যায়।
সুলতানা কামাল  এটা ঠিক, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। কিন্তু ফৌজদারি ব্যবস্থায় সবকিছুর সমাধান পুরোপুরি হয় না। এখানে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আমরা যারা সেই অর্থে খুব ভাগ্যবান ছিলাম, যারা ছোটবেলা থেকে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি, আমরা যারা একসঙ্গে কাজ করেছি, আমাদের মধ্যে বেশ প্রগতিশীলতার প্রভাব পড়েছে। তার ফলে হয়েছে কি, আমরা যখন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, কোনো জায়গায় নিজেকে একটা বিপরীত শক্তির মুখোমুখি দাঁড় করা হয়েছে, তখন আমরা সাংগঠনিক সমর্থন পেয়েছি, সাংস্কৃতিক সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু এখন আমরা, আমাদের শিশুরা ভীষণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। জানি না, আমাদের পাশের বাসায় কারা থাকে।
প্রথম আলো  তখন ফৌজদারি ব্যাপার চলে আসে?
সুলতানা কামাল  হ্যাঁ। কিন্তু ফৌজদারি পন্থায় সমাধান হয় না আসলে। এটা হলো চারিত্রিক কতগুলো গুণ বিকশিত করার ব্যাপার, মানুষে মানুষে সম্পর্কিত হওয়ার ব্যাপার। সেই সম্পর্কিত হওয়ার সুযোগ আমাদের শিশুদের হচ্ছে না। এখন প্রতিযোগিতাও বেড়ে গেছে সমাজে এবং যেখানে লিঙ্গীয় ভাবটা আছে, সেখানে যৌনতার বিষয়টিও চলে আসছে। একজন তরুণের মনে হয়তো ভাব জাগছে এবং আমাদের এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, এই বিচ্ছিন্ন সমাজ, এই সংস্কৃতিবিহীন একটা সমাজ সেটাকে কিন্তু উসকে দিচ্ছে। একই সঙ্গে আমার এখন মনে হচ্ছে, ধর্মীয় মৌলবাদও অন্যভাবে এদের একটা সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা সরাসরি মেয়েদের দোষ দেয়। তারা পরিষ্কার বলে, তোমরা যদি পর্দার মধ্যে না চলো, তাহলে তোমাদের এ রকম করবেই। আমাদের সমাজে একদিকে প্রগতির ধারা এসেছে, মেয়েরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে এবং সেটা প্রতিষ্ঠা করতে চায়; অন্যদিকে সমাজে মৌলবাদের ধারা, পুরুষতান্ত্রিক কূপমণ্ডূকতা—এগুলোকে কার্যকরভাবে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। এসব ব্যাপারে আমাদের রাষ্ট্র সব সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকেছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের ভেতরে স্বচ্ছতা নেই। রাষ্ট্র ভীষণভাবে দ্বৈত মনের খেলা খেলছে।
প্রথম আলো  নারী নির্যাতনবিরোধী আইন আছে, নারী অধিকারসংক্রান্ত নানা আন্তর্জাতিক চুক্তি, সমঝোতা, কনভেনশন ইত্যাদিতেও স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এ দেশে নারী আন্দোলনের কণ্ঠস্বরও যথেষ্ট সরব।
সুলতানা কামাল  আন্দোলনের চাপে এগুলো হয়েছে। কিন্তু চাপটা দিয়েছে নারীরাই। সামগ্রিকভাবে এটা একটা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়নি। কিছু কিছু অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি আমাদের সমর্থন দিয়েছেন; কিন্তু এটা তো এখন পর্যন্ত বিরাট সামাজিক আন্দোলন হিসেবে দাঁড়ায়নি। এখন আইন আছে, নানান চুক্তি আছে; এগুলো হাতিয়ার। এখন হয় আমি যন্ত্রটা ব্যবহার করতে জানি না, অথবা ওই যন্ত্রের ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। আইন তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধান এনে দেবে না, আইনকে ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহারকারীকে তো ওই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সেটা তো আমাদের আইন ব্যবহারকারীরা করছেন না।
প্রথম আলো  উত্ত্যক্তকরণ ছাড়াও পারিবারিক পর্যায়ে কিছু নিগ্রহ-নির্যাতনের কারণে পরপর কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে। আত্মহত্যা, আপন শিশুদের হত্যা করে নিজেকেও শেষ করে দেওয়া—এ ধরনের রোমহর্ষক ব্যাপার। এটা কেমন প্রবণতা? ঘরের ভেতরে নারীর অবস্থা কি আরও খারাপ হচ্ছে?
সুলতানা কামাল  যে ঘটনাগুলো আমরা দেখলাম, এগুলো খুবই কষ্টদায়ক, খুবই দুঃখজনক। এখানেও বিশ্লেষণের কয়েকটি বিষয় আছে। প্রথমত, ঘরের ভেতরে নারীর অবস্থান নিয়ে আমাদের একটু চিন্তা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখানে সম্প্রতি কয়েকটি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে গেছে। যিনি তাঁর সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন, তিনি অপরাধমূলক কাজ করেছেন। হত্যা ও আত্মহত্যা দুটোই অপরাধমূলক কাজ এবং শিশুহত্যা একটি অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। সুতরাং, এসব অভিযোগ থেকে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। শিশুদের মা হলেও শিশুকে হত্যা করার অধিকার তাঁর নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা ঘটছে কেন? যে নারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটালেন, তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে চিনি না; কিন্তু আমার ধারণা, এঁরা ছোটবেলা থেকে এই ধারণা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন যে স্বামীর সংসারই তাঁর একমাত্র স্থান, স্বামীর ভালোবাসাই তাঁর একমাত্র ভালোবাসা। যেমন করে হোক, ওই জায়গাটা তাঁকে টিকিয়ে রাখতে হবে। যখন সেখানে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, তখন তিনি প্রচণ্ড হীনম্মন্যতায় ভুগেছেন, মরিয়া হয়ে গেছেন। যদি একজন মানুষ এটা বুঝতে পারে, যেটা সভ্য-সংস্কৃতিমান সমাজের কাম্য যে আমার সম্পর্কের ভেতরে অনেক ধরনের বিষয় চলে আসতে পারে। আমার বন্ধুর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ ঘটতে পারে, আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বহুদিন একসঙ্গে ঘর করার পরও স্বামী বা স্ত্রী দুজনেরই মনে হতে পারে যে আমাদের একসঙ্গে চলা আর সম্ভব হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সমস্যাটা সমাধানের কিন্তু সুসভ্য, শোভনীয় নিয়ম আছে। আত্মহত্যা বা নিজের শিশুদেরও নিজের সঙ্গে শেষ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। আমি বলব, নিজের জীবনের মূল্য, মানুষ হিসেবে নারীকে নিজের মর্যাদা উপলব্ধি করতে হবে। নারীরা যখন এটা বুঝবে, তখন এ ধরনের সমস্যা এড়ানো অনেক সহজ হয়ে আসবে।
প্রথম আলো  নারীদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাও একটা সমস্যা।
সুলতানা কামাল  হ্যাঁ, অনেক বড় সমস্যা। নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নেই বলে স্বামীর ঘর, যেটাকে সে তার একমাত্র আশ্রয় বলে জানে, সেই ঘর, সেই স্বামীকে যখন সে হারাতে যাচ্ছে, তখন সে দিশেহারা হয়ে পড়ে। স্বামীর ঘর হারিয়ে সে একা যাবে কোথায়? কীভাবে তার চলবে? একা একজন নারীর এ সমাজে টিকে থাকা অত্যন্ত সংগ্রামময়। সে সামাজিকভাবে নিগৃহীত হতে পারে, শারীরিকভাবে নির্যাতিত হতে পারে, যৌন-নির্যাতনের শিকার হতে পারে। তাকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে না; সে চাকরি চাইতে গেলে বলা হবে, কেন, কী ব্যাপার, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক নেই কেন, নিশ্চয়ই ওই নারীর কোনো সমস্যা আছে।
প্রথম আলো  এ ব্যাপারে রাষ্ট্র কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
সুলতানা কামাল: একাকী নারীর জন্য রাষ্ট্রও এখন পর্যন্ত কিছু করছে না। যেমন, নারীর সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্র কিন্তু এখনো দোনোমনা করছে। নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য যেসব ব্যবস্থা দরকার, সেগুলো রাষ্ট্র এখনো করে দিতে পারেনি। কেউ নারীকে দৃঢ়কণ্ঠে বলছে না যে ঠিক আছে, তুমি তোমার চ্যালেঞ্জ নাও, আমরা তোমার সঙ্গে আছি।
প্রথম আলো  ধরা যাক, কোনো মহল্লায় কোনো মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে দিনের পর দিন, তখন যদি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং মহল্লার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করেন, বখাটেদের বাবা-মাকে ডাকেন...আমি সামাজিক চাপের কথা বলছি...
সুলতানা কামাল  এটা খুব ভালো কথা বলেছেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যদি কমিউনিটি পর্যায়ে এগুলো প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে নিশ্চয়ই কিছু সুফল পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা দেখছি, বখাটেদের পৃষ্ঠপোষকতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালীদের দিক থেকে, তখন হয়তো পুলিশও বখাটেদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে চাইছে না। অনেক জায়গায় জনপ্রতিনিধি বখাটের পক্ষে দাঁড়িয়ে পুলিশকে বলছেন, মামলা নিয়ো না। এসব তো আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখছি। কিন্তু যদি ঠিকমতো স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে ব্যবহার করা যেত একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে, তাহলে অবশ্যই অবস্থার অনেক উন্নতি হতো।
প্রথম আলো  আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুলতানা কামাল  আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.