স্কুল ব্যাংকিং-অনেক সম্ভাবনার প্রথম সোপান

স্কুল ব্যাংকিং স্কিম চালু করার সাত মাসের মধ্যেই এর আওতায় সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট খোলার খবর নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে গত বছর নভেম্বরে স্কুল ব্যাংকিং চালুর নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


ওই বছরই বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ সেবা চালু করে। আমরা জানি, যুক্তরাষ্ট্রের কান্ট্রি ব্যাংক ফর কিডস এবং রয়্যাল ব্যাংক অব স্কটল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের অনেক জায়গায়ই এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষীই মনে হয়েছিল। কিন্তু গত সাত মাসে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে, সংশ্লিষ্টরা ভুল করেননি। ৪৭টি তফসিলি ব্যাংকের সিংহভাগের এরই মধ্যে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ে এগিয়ে আসা এবং বাকিগুলোর শিগগিরই চালু করার সিদ্ধান্ত নতুন এ ব্যবস্থার বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও তুলে ধরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ আশাবাদের সঙ্গে আমরা একমত, স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা কার্যকর হবে। বিদ্যালয়ের নানা ফি কিংবা বৃত্তি-উপবৃত্তি নিয়ে যে অনিয়মের খবর বিভিন্ন সময় আমরা পেয়ে থাকি; এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সব লেনদেন সম্পন্ন হলে তা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও কর্মজীবনে আরও সম্ভাবনার দ্বার খুলে যেতে পারে। আমরা দেখেছি, অনেক শিক্ষিত নাগরিকও অনভ্যস্থতার কারণে ব্যাংকিংয়ে উৎসাহ বোধ করেন না। যেসব শিক্ষার্থী শুরু থেকেই নিজের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছে, তাদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটবে না। আধুনিক অর্থব্যবস্থা সম্পর্কেও তাদের ধারণা নিঃসন্দেহে পরিচ্ছন্ন থাকবে। কিছু ব্যতিক্রমের কথা বাদ দিলে সনদপত্রসহ শিক্ষাজীবনে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্রে নামধামের গরমিল আমাদের দেশে একটি সাধারণ বিষয়। এটা পরবর্তী জীবনে অনেক শিক্ষার্থীর জন্য স্থায়ী ভোগান্তি হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তা যথেষ্ট যাচাই-বাছাই হবে বলে আশা করা যায়। আবার সঞ্চয় যত সামান্যই হোক না কেন, এর ভিত্তিতে শিক্ষাঋণ কিংবা শিক্ষা শেষে উদ্যোক্তা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও এ অ্যাকাউন্টধারীরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। আমরা আশা করি, নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, স্কুলশিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সত্যিকারের সম্ভাবনার প্রথম সোপান হয়ে উঠুক।
 

No comments

Powered by Blogger.