ময়নামতির চরের কবি by এবিএম ফজলুর রহমান

ময়নামতির চরের মতো বিখ্যাত ও কালজয়ী কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি বন্দে আলী মিয়ার আজ ২৭ জুন ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন রাজশাহীর কাজীহাটার বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে পাবনার রাধানগরের 'কবিকুঞ্জে' তাকে সমাহিত করা হয়।


১৯০৯ সালের ১৭ জানুয়ারি পাবনা শহরের রাধানগরের নারায়ণপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন কবি বন্দে আলী মিয়া। কবির শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনার গ্রামীণ ও নাগরিক পরিমণ্ডলে। তিনি ১৯২৭ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে চিত্রবিদ্যায় ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেন এবং একই বছর কলকাতার আশুতোষ লাইব্রেরি কর্তৃক শিশুতোষ বই 'চোরজামাই' প্রকাশ করেন।
কলকাতায় থাকার সুবাদে সমকালীন পত্র-পত্রিকার সঙ্গে কবি বন্দে আলী মিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কিছুদিন পর কবি 'ইসলাম দর্শনে'র সঙ্গে জড়িয়ে যান। করপোরেশন স্কুলে শিক্ষক থাকাকালে তিনি 'কিশোর পরাগ', 'শিশু বার্ষিকী', 'জ্ঞানের আলো' প্রভৃতি মাসিক পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও জড়িত ছিলেন।
১৯৩২ সালে কবি বন্দে আলী মিয়ার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ 'ময়নামতির চর' প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করে কলকাতার ডিএম লাইব্রেরি। কবির এই 'ময়নামতির চর' কাব্যগ্রন্থ পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশংসাপত্র পাঠান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর কবি ঢাকায় সাহিত্য লিখে এবং ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৬২ সালে শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। পরে ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বেতারকেন্দ্রে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে চাকরি নেন এবং একই বছর সাহিত্য-প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি রাজশাহীর উত্তরা সাহিত্য মজলিস কর্তৃক সংবর্ধনা জ্ঞাপন এবং পদক ও পুরস্কার পান। অবশেষে কবি বন্দে আলী মিয়া ১৯৭৯ সালের ২৭ জুন রাজশাহীর কাজীহাটার বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। কবি বন্দে আলী মিয়া নিরিবিলি ও অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। কখনও তাকে উত্তেজিত, রাগারাগি, চেঁচামেচি করতে দেখা যেত না। আপন ভুবনে তিনি বিচরণ করতেন। লেখালেখি নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকতেন। লেখালেখির জন্য তার কোনো বাঁধাধরা সময় ছিল না। মহান এ কবির স্মৃতি রক্ষার্থে দীর্ঘ ৩১ বছরেও গড়ে উঠেনি কোনো প্রতিষ্ঠান। কবি বন্দে আলী মিয়াকে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকারের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। কবি বন্দে আলী মিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ওপর বরেণ্য কবি ও সাহিত্যকরা নানা স্মৃতিকথা লিখেছেন। কবিকে স্মরণ করতে ও তার পরিবারের উদ্যোগে ২৭ জুন সোমবার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
 

No comments

Powered by Blogger.