সব নাগরিকের জন্য অভিন্ন আইন হওয়া প্রয়োজন-সাংসদদের করমুক্ত বেতন-ভাতা

দেশের প্রত্যেক যোগ্য নাগরিকের আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও আইনপ্রণেতারাই আইন করে নিজেদের আয়করমুক্ত রেখেছেন। আইন অনুযায়ী, একজন নাগরিকের বার্ষিক আয় এক লাখ ৬৫ হাজার টাকার বেশি হলে তাঁকে আয়কর দিতে হয়। একজন সাংসদের মাসিক আয় বেতন-ভাতা মিলে ৯৯ হাজার টাকা।


সে ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ টাকা। তার পরও তাঁর আয় করমুক্ত রাখার কী যুক্তি থাকতে পারে? এ ব্যাপারে সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান ন্যায়সংগতভাবেই বলেছেন, রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার। জনগণের করের টাকা গ্রহণ করে কারও কর না দেওয়া সম-অধিকারের পরিপন্থী। সাবেক আইনমন্ত্রী ও সাংসদ মওদুদ আহমদও স্বীকার করেছেন, রাষ্ট্রের সব নাগরিকের মতো সাংসদদেরও করের আওতায় আনা উচিত। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংসদদের বেতন (পারিশ্রমিক) করমুক্ত রাখার যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিনি বলেছেন, সাংসদদের বেতন করমুক্ত থাকা প্রয়োজন, তবে অন্যান্য ভাতার ওপর কর ধার্য করা যেতে পারে। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে এর বিপরীত নিয়মই চালু আছে। সেখানে সাংসদদের ভাতা করমুক্ত হলেও বেতন করমুক্ত নয়।
পৃথিবীর খুব কম দেশেই সাংসদেরা কর রেয়াদের সুবিধা পেয়ে থাকেন। আমাদের দেশে ১৯৭৪ সালে সাংসদদের বেতন আয়করমুক্ত করে আইন পাস করা হয়। যদিও বেতনের বাইরের আয় তথা ভাতাদি আয়করের আওতায় ছিল। কিন্তু চলতি বছরে ভাতাও আয়করমুক্ত করা হয়েছে। তিয়াত্তরের পর এ পর্যন্ত ১২ বার সাংসদদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় কোনো বিষয়েই সরকার ও বিরোধী দল মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারলেও নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারে তাঁরা ঠিকই একমত হন। এমনকি ভোটারবিহীন সংসদে পাস করা আইনের সুবিধা নিতেও তাঁরা দ্বিধা করেন না। ’৮৮ সালের সংসদ সাংসদদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির আইন পাস করেছিল। এরপর শুল্কমুক্ত গাড়ি নিয়ে কম কেলেঙ্কারি হয়নি। অনেকে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তা বিক্রিও করে দিয়েছেন।
নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিতে আইনপ্রণেতারা এমন কিছু করতে পারেন না, যা অন্যদের জন্য বৈষম্য সৃষ্টি করে। আইন পরিবর্তন করে হলেও সব নাগরিকের সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আইন সবার জন্য সমান। নির্বাচিতরা কোনোভাবেই নির্বাচকমণ্ডলী থেকে বেশি সুবিধা নিতে পারেন না। শুল্কমুক্ত গাড়ি নিয়ে অতীতের মতো বাণিজ্য যাতে না হয়, সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে সাংসদদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে সাবেক উপদেষ্টা যে কমিশন গঠনের কথা বলেছেন, তাও গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখা প্রয়োজন। চলতি সংসদে সাংসদদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর যে আইন করা হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেত্রী তার বিরোধিতা করেছিলেন। কোনো কমিশন বা সংস্থার সুপারিশে সেটি করা হলে বিরোধিতা ও বিতর্কের অবকাশ থাকবে না বলেই আমাদের ধারণা।

No comments

Powered by Blogger.