ডেনমার্ক নয়, নিয়তির কাছেই ডাচদের হার

ফুটবল কতটা নিষ্ঠুর খেলা, আরিয়েন রবেন সেটা অনেকবারই টের পেয়েছেন। কদিন আগেই তাঁকে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় পুড়তে হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আরেকটি দুঃস্বপ্ন তাঁর সামনে। এবার 'ঘাতক'-এর নাম ডেনমার্ক, ২০১২ ইউরোর মৃত্যুকূপ 'বি' গ্রুপে জার্মানি ও পর্তুগালের পাশে যাদের ধরা হচ্ছিল সহজতম প্রতিপক্ষ।


সেই ডেনমার্কই চমকে দিল নেদারল্যান্ডসকে, নাকি ডেনমার্কের ছদ্মবেশে ভাগ্যদেবী? স্কোরলাইন যদিও বলছে, মিখেল কর্ন-দেলির একমাত্র গোলে জিতেছে ডেনমার্ক, তবে দর্শকরা নিঃসন্দেহে একমত হবেন কর্ন-দেলির নয়, আসলে নিয়তির কাছেই হেরে গেছে ডাচরা।
কখনো কখনো এমন একটা দিন আসে, যেদিন কিছুতেই কিছু হয় না। খারকিভের মেটালিস্ট স্টেডিয়ামে শনিবারের সন্ধ্যাটা ছিল ডাচদের জন্য এমনি একটি দিন। মাঝমাঠ থেকে চমৎকার সব পাস বাড়িয়েছেন ওয়েসলি স্নেইডার, দারুণ সব সুযোগ পেয়েছেন রবেন, ইব্রাহিম আফেলি আর রবিন ফন পার্সি; এমনকি স্নেইডার নিজেও। কিন্তু গোলের দেখা মেলেনি। কখনো বল চলে গেছে ক্রসবারে হাওয়া লাগিয়ে, ফিরে এসেছে পোস্টে চুমু খেয়ে, কিন্তু গোললাইনটা অতিক্রম করতেই যেন হাওয়া ভরা চামড়ার গোলকটার যত আপত্তি! অন্যদিকে রক্ষণ আঁটসাঁট করে কাউন্টার অ্যাটাক-নির্ভর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামা ডেনমার্ক গোল পেয়ে গেল সহসা এবং সহজেই! ফন পার্সি লক্ষ্যভেদের সুযোগ নষ্ট করলে, তার রেশ ধরে দ্রুত পাল্টা আক্রমণে উঠে আসে ডেনমার্ক। গিওর্ঘি ফন ডার উইল ও জন হেইটিংহাকে ফাঁকি দিয়ে বল পেয়ে যান কর্ন-দেলি, এরপর মার্টিন স্টেইকলেনবুর্হের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে পাঠিয়ে দেন জালে। মুহূর্তেই হতভম্ব 'অরাঞ্জে'রা, কিছুক্ষণ আগেই যারা অনুশীলনের আয়েশে নির্বিঘ্নে খেলছিল, তাদের মাথায় যেন বিনা মেঘে বাজ পড়ল! গোলের মিনিট দুয়েক আগেই ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল কোচ বার্ত ফন মারউইকের নির্ভার চেহারাটা, গোল হজম করার পরও অবশ্য চেহারায় খুব বেশি বদল আসেনি। কারণ শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে উত্তর আয়ারল্যান্ডের জালে তারা বল পাঠিয়েছে ছয়বার, এত সহজেই কি মরচে পড়ে যাবে সেই ধারে? ধীরে ধীরে মারউইকের চেহারায়ও ফুটে উঠতে লাগল অবিশ্বাস, কোন এক জাদুবলে যেন গোলমুখে অদৃশ্য এক তালাই ঝুলিয়ে দিয়েছে ডেনমার্ক। মিনিট বিশেক সময় বাকি থাকতে উইঙ্গার আফেলিকে তুলে নিখাদ স্ট্রাইকার ক্লাস-ইয়ান হুন্তেলারকে নামিয়েছেন মারউইক, দুই ডিফেন্ডার ফন দার উইল ও নিজেল দি ইয়ংকে তুলে নিয়ে খেলিয়েছেন ডির্ক কুয়েট ও রাফায়েক ফন দার ফার্তকে। একটা সময় একসঙ্গে মাঠে ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও জার্মান বুন্দেসলিগার দুই সর্বোচ্চ গোলদাতা ফন পার্সি ও হুন্তেলার। কিন্তু সাফল্য ধরা দেয়নি তাঁদের। শেষ সময়ে বক্সের ভেতর ডেনিশ অধিনায়ক ড্যানিয়েল অ্যাগারের হাতেও লেগেছিল বল, কিন্তু সেটা চোখ এড়িয়ে যায় রেফারির। কাজে আসেনি শেষ মিনিটে পাওয়া কর্নারও। পূর্ব ইউরোপের প্রথম ইউরোতে তাই ডাচদের শুরুটা হলো হতাশা দিয়ে, বিশ্বকাপের রানার্সআপদের তাই দ্বিতীয় পর্বে ওঠাটাই হুমকির মুখে। আর ডেনমার্ক? তারা আবারও প্রমাণ করল, ইউরোর মূল পর্বের খেলায় প্রথমে গোল করতে পারলে তাদের আর হারানো যায় না। প্রথম গোলটা ডেনমার্কের- এমন ৯ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছিল ডেনিশরা, বাকি চারটি হয়েছিল ড্র। তাই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাদের জয়টাকে কিন্তু মোটেই অঘটন বলা যাচ্ছে না! এএফপি, সকারনেট

No comments

Powered by Blogger.