যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সংশয়

দীর্ঘ ৪০ বছর চলে গেছে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ও একাত্তরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্তদের বিচার হয়নি আজও। অথচ এই দাবি জনগণের। জনদাবি পূরণের শর্ত মেনে নেয় বর্তমান সরকার। এমনকি ক্ষমতাসীন দলটির নির্বাচনী ওয়াদা ছিল, নির্বাচিত হলে তারা একাত্তরে মানবতাবিরোধীদের বিচার করবে।


ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্য বিপুল জনরায় পায় বর্তমান সরকার। সংগত কারণেই সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, নিশ্চিতভাবেই বুঝি বিচার হবে মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের। কিন্তু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এখন বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য বিচারক ও কেঁৗসুলি নিয়োগ করেছে। সব সময়ই তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাসও প্রদান করছে। কিন্তু একটি মহল সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে চলেছে। বিশেষ করে বিচারক ও আইনজীবী নিয়োগ নিয়েই বেশি কথা বলা হচ্ছে। কোনো কোনো মহল থেকে আইনজীবীদের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করা হচ্ছে। এ বক্তব্যকে সরকারের পক্ষ থেকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে মনে হয় না। আইনজীবী নিয়োগ নিয়ে পত্র-পত্রিকায়ও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেরই কথা, কোন কারণে দেশের প্রথিতযশা আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও এ ধরনের বিচারকাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোনো আইনজীবী আমাদের দেশে নেই। ফলে প্রথিতযশা আইনজীবীরাও বর্তমানে নিযুক্ত আইনজীবীদের মতোই হবেন। তবে বিদেশি আইনজীবী আনার ব্যাপারটি হয়তো এখানে আলোচনায় আসতে পারে। আর সেই সুযোগও এখন পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়নি। অভিযুক্তদের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের চেষ্টা চলছে_এ কারণেই নয়, এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা আছে এমন আইনজীবী আনাটা সরকারের জন্য জরুরি। এতে বর্তমানে নিয়োজিত আইনজীবীদেরও অবমূল্যায়ন হবে না।
তবে বিচারকাজে বাধা আসতে পারে, এমন প্রক্রিয়া যে চলছে তাও অনুমান করা যায়। এ ক্ষেত্রে 'দ্য ইকোনমিস্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত আইনমন্ত্রীর একটি মন্তব্য অবশ্যই গুরুত্ববহ। তিনি বলেছেন, 'অভিযুক্তদের পক্ষে নানা মহল কাজ করছে এবং তারাই বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে।' আইনমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক হওয়াই স্বাভাবিক। আর যেহেতু এ ধরনের বক্তব্য এসেছে, তাই সরকারের উচিত হবে বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া। সরকার যে বিষয়টি সম্পর্কে আন্তরিক, তা প্রমাণের জন্য বিচার প্রক্রিয়াটিকে গতিসম্পন্ন করা অপরিহার্য। মনে রাখা প্রয়োজন, তদন্ত কাজকে দ্রুততর করে বিচারকাজের দিকে এগিয়ে যেতে না পারলে এ সরকারের মেয়াদকালে বিচার সম্পন্ন হবে বলে মনে হয় না। এটা ভাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এ সরকার যদি ভবিষ্যতে আবার ক্ষমতায় না আসতে পারে, তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ আর না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বর্তমান মহাজোটের বাইরে চারদলীয় জোটই দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি। আর সেই জোটের বড় একটি দল হচ্ছে অভিযুক্তদের রাজনৈতিক সংগঠন। তারা যদি ক্ষমতাসীন হয় তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন কথা 'দ্য ইকোনমিস্ট'ও উল্লেখ করেছে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারকে ভাবতে হবে, গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট কি না। ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়া দেখে মনে হয়, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকাকালে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হওয়া কঠিন। তাই বিচারকাজ ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক হবে_এটা সবার প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.