নারী উন্নয়ন-বেইজিং কর্মপরিকল্পনা: নারীর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি by সালমা খান

আজ থেকে ১৫ বছর আগে ১৯৯৫ সালে ৪ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এযাবৎকালের বিশ্বে নারী জাগরণ ও লিঙ্গসমতা স্থাপনের উদ্দেশ্যে এক বৈশ্বিক কার্যক্রম প্রণয়ন ও জাতিসংঘের ১৮৯টি রাষ্ট্রের সর্বসম্মতিক্রমে তা গ্রহণ করতে পারা ছিল বেইজিং নারী সম্মেলনের যুগান্তকারী অর্জন।


বেইজিং প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন বা বেইজিং কর্মপরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নারী উন্নয়নের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক এজেন্ডা হিসেবে পরিচিত।
১৯৯৫ সালের বেইজিং সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আগের তিনটি নারী সম্মেলনের অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনাগুলো নিবিড় পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে উন্নয়নে নারীর পূর্ণ অংশীদারির পথে প্রধান উদ্বেগ বা অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করা এবং প্রতি পর্যায়ে কৌশলভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীর উদ্বেগের মোকাবিলা করে লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা। লিঙ্গসমতা স্থাপন ও নারীর পূর্ণ ক্ষমতায়নের পথে বেইজিং কর্মপরিকল্পনায় যে উদ্বেগ বা অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো নারী ও দারিদ্র্য, অর্থনীতি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, নারীর প্রতি সহিংসতা, পরিবেশ, গণমাধ্যম, মানবাধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ও মেয়ে শিশু। এই কার্যক্রমের মূল বৈশিষ্ট্য হলো উদ্বেগগুলোর মোকাবিলায় রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং সেই সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে এনজিও ও সুশীল সমাজের কৌশলগত পরিবীক্ষকের ভূমিকার ওপর গুরুত্ব স্থাপন করা।

২.
জাতিসংঘের নারীর মর্যাদাবিষয়ক কমিশন বৈশ্বিক পর্যায়ে বেইজিং কর্মপরিকল্পনার সার্বিক পর্যালোচনার দায়িত্বে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে কমিশনের ৫৪তম সভায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বেইজিং+১৫ বাস্তবায়ন, অর্জন ও বিদ্যমান সমস্যাগুলো, বিশেষভাবে বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে নারীর জীবনে নব-উদ্ভূত সমস্যার মূল্যায়ন করা হয়। এ প্রসঙ্গে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নারীর পূর্ণ ক্ষমতায়নের চ্যালেঞ্জগুলোও পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক মূল্যায়নে দেখা যায়, কিছু উন্নত দেশ বাদে সর্বত্র বিভিন্ন বিষয়ে আজও ব্যাপক লিঙ্গবৈষম্য রয়ে গেছে। উপরন্তু বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীর জীবনে নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, যথা—পরিবেশ বিপর্যয়, বিশ্বায়ন, আঞ্চলিক সংঘর্ষে নারীর ওপর হুমকি ইত্যাদি, যা সার্বিকভাবে নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম-অংশীদারের পথে এক বিরাট অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসন ও লিঙ্গসমতা স্থাপনে মূল অন্তরায় ছিল স্থানীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সীমিত পরিধি, আইনের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের পূর্ণ সমতার অভাব ও আর্থসামাজিক সুযোগগুলোতে নারীর প্রবেশগম্যতার সীমাবদ্ধতা।
বেইজিং সম্মেলনের ১৫ বছর পর বেইজিং কর্মপরিকল্পনার মূল্যায়নে বলা যায় যে ১৯৯৭ সালে গৃহীত জাতীয় নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ না নিলেও নব্বইয়ের দশকে সার্বিক মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন সরকারি নীতি, এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক গৃহীত ক্ষুদ্রঋণ ও শিক্ষা প্রকল্পের মূল প্রভাব লক্ষিত হয়েছে নারীর জীবনে। মানব উন্নয়ন সূচক অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান অগ্রগণ্য, মূলত নারীর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে। ২০০৪ সালের মধ্যে নারীর প্রজনন হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের বৈষম্য দূর করা, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানো, পুরুষের তুলনায় ব্যাপক হারে ক্ষুদ্রঋণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ ও পরিধি বৃদ্ধি, বিশেষভাবে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে তরুণ নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি—এ সবই ছিল নিম্ন মাথাপিছু আয়ের যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক দৃষ্টান্তমূলক অর্জন।
বেইজিং কর্মপরিকল্পনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’কে মানবাধিকার ইস্যু হিসেবে মানা এবং লিঙ্গসমতা স্থাপনের একটি প্রধান অন্তরায় হিসেবে একে দৃশ্যমান করা। নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে এবং নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য, যথা—নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ (সংশোধন ২০০৩), আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ (সংশোধন ২০০৬) এবং এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ ইত্যাদি।
বেইজিং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বৈশ্বিক সমীক্ষায় প্রতীয়মান হয় যে বিশ্বে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। মহিলা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে পারিবারিক নির্যাতন ইস্যুটি গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। অবশেষে ২০০৮ সালে পারিবারিক নির্যাতন আইন ২০০৮-এর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়। আইনি অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীর আরেকটি বিশিষ্ট অর্জন সংশোধিত নাগরিক আইন ২০০৯, যার মাধ্যমে নারী বিদেশি স্বামী ও সন্তানকে নাগরিকত্ব বর্তাতে (transmit) পারবে। সাম্প্রতিক সময়ের ক্রমবর্ধমান যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞা ও নির্যাতন মোকাবিলায় হাইকোর্ট প্রদত্ত রূপরেখা নারীর মানবাধিকার স্বীকৃতির এক মাইলফলকস্বরূপ। এ ছাড়া মানবাধিকার কমিশন অ্যাক্ট ২০০৯, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬, নির্বাচনে নারীর সংরক্ষিত আসন (সংশোধিত) ২০০৫ নারীর মানবাধিকার বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগগুলোর অন্যতম উদাহরণ।

৩.
বেইজিং কর্মপরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ১৯৯৬ সালে প্রণীত সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়নি মূলত রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে, প্রশাসনিক অবহেলা ও অব্যস্থাপনার কারণে। ফলে কর্মপরিকল্পনায় চিহ্নিত ১২টি উদ্বেগের যথাযথ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে নারীর জন্য নবতর সমস্যার উদ্ভব হওয়ায় বেইজিং ১৫-এর অগ্রগতি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি মূলত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও আইটি শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীর পদচারণ অতি ক্ষীণ। উপরন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিবাহ নারীশিক্ষা প্রসারের প্রধান অন্তরায়।
বেইজিং সম্মেলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ইস্যুটি যথেষ্ট দৃশ্যমান ও উদ্বেগপূর্ণ বলে বিবেচিত হলেও নারী নির্যাতনের হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী বলা চলে। গবেষণা তথ্যমতে, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ৩৯.৭ শতাংশ নারী এবং গ্রামাঞ্চলে ৪১.৭ শতাংশ নারী কোনো না কোনো প্রকার নির্যাতনের শিকার হন।
বাংলাদেশেও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো নারীস্বাস্থ্যের বিষয়টি মূলত প্রজননস্বাস্থ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রজনন হার হ্রাসে বাংলাদেশ দর্শনীয় সাফল্য লাভ করলেও সাম্প্রতিককালে আমাদের বহুল প্রশংসিত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের ৪৫ ভাগ দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে না এবং ৩৩ শতাংশ গর্ভধারণ অপরিকল্পিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশে ১৪ শতাংশ মাতৃমৃত্যুর কারণ অনভিপ্রেত গর্ভপাত, যার দায় শুধু নারীকেই গ্রহণ করতে হয়। ইউনিসেফ জরিপে প্রকাশ, বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে এবং এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এক বছরের মাথায় অন্তঃসত্ত্বা হয়। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীর কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ-সেবা পৌঁছায় না।
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নারীমুক্তির প্রধান সোপান। বেইজিং সম্মেলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মে নারীর সম্পৃক্ততা যদিও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, কিন্তু সার্বিকভাবে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের হার মাত্র ২৬ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নিম্নতম। এর মূল কারণ দুটি। প্রথমত, মূলত তরুণ নারী—অর্থাৎ শুধু ১৫ থেকে ২৪ বছরের নারীদের জন্য দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পঁচিশোর্ধ্ব নারী—যাঁরা প্রথাগতভাবে কৃষি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত থাকেন, তাঁদের কর্মের সুযোগ সংকোচন হয়েছে। বিশেষত, যন্ত্রায়নের কারণে কৃষি খাত আগের মতো শ্রমনিবিড় ও নারীশ্রমনির্ভর নয় বিধায় অতিদরিদ্র নারীর জন্য কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ সংকুচিত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য নারীর অর্থনৈতিক অবদানের স্বীকৃতির পরিপন্থী।
নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সংসদে ও ইউনিয়ন পরিষদে নারীর জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং ভোটাধিকার প্রয়োগে নারীর আধিক্য নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেও সামাজিক প্রথা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে আশাপ্রদ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর অসম অধিকার এবং পরিবার ও সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা বিভাজনে আইনি ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আসায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমতা অর্জনে বাংলাদেশের নারীর অগ্রগতি সীমিতই রয়ে গেছে।

৪.
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কোনো শর্ত ছাড়াই বেইজিং পিএফএ অনুমোদন করে। পিএফএ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘ ১৯৯৬ সালের মধ্যেই প্রত্যেক রাষ্ট্রকে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে একটি আন্তমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে। পিএফএর ১২টি উদ্বেগের ওপর কৌশলগত উদ্দেশ্যাবলি চিহ্নিত ও কর্মপদ্ধতি নির্ণয়ের জন্য ১৫টি মন্ত্রণালয়কে পিএফএ বাস্তবায়ন কর্মসূচিতে অংশীদার করে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হয়, যাতে এনজিও, নারীসংগঠন, মানবাধিকার ও আইনসহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়। নারীর ১২টি উদ্বেগ নিরসনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় এনে সরকারি নীতি ও কর্মসূচিতে সমন্বয় সাধন করা এবং প্রতিক্ষেত্রে নারীর সম-অংশীদার নিশ্চিন্ত করা ছিল এই জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বা ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান (ন্যাপ)-এর মূল লক্ষ্য।
কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের কার্যসূচিতে জেন্ডার ফোকাস না থাকায় এবং নারীর ইস্যুগুলোকে মূলধারার কর্মসূচিতে সম্পৃক্তকরণের কৌশলগত দক্ষতার অভাবে ‘ন্যাপ’ বহু ক্ষেত্রে অবাস্তবায়িত রয়ে যায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার ফোকাল পয়েন্টগুলোর ক্ষীণ ভূমিকা, নারীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত করা সম্পর্কে জ্ঞান ও সামর্থ্যের অভাবও ছিল প্রধান অন্তরায়।
বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব ও সমাজে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের পথে তার প্রথম যুদ্ধে জয়ী হয়েছে; নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অবদান দৃশ্যমানতা অর্জন করেছে, নারী সীমিতভাবে হলেও বিভিন্ন অপ্রচলিত খাতে তার অবদান ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ রেখে চলেছে। নারী আন্দোলন, মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও গণমাধ্যম অহরহ নারীর সম-অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে, যা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে টেকসই ভূমিকা রাখতে পারে। এই নব বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের দায়বদ্ধতার পুনর্মূল্যায়ন করে প্রতি মন্ত্রণালয় ও খাতে একই সঙ্গে নারীবান্ধব প্রকল্প ও মূলধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সব আইনের দৃষ্টিত নারীর সমতা নিশ্চিত করতে হবে, যা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পূর্বশর্ত।
সালমা খান: অর্থনীতিবিদ ও নারীনেত্রী।

No comments

Powered by Blogger.