সংসদ অধিবেশনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

শেষ হলো জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশন। শুরুটা সাদামাট হলেও বিরোধী দলের অংশগ্রহণে শেষটা ছিল বেশ জমজমাট। এবারের অধিবেশন চলেছে ৩৩ কার্যদিবস। কিন্তু তার পরও মানুষ স্বস্তি বোধ করেছে। বিরোধী দলের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত সংসদের প্রত্যাশা কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে।


টানা ৭৪ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর গত ১৫ মার্চ সংসদে ফিরে আসে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এবারের অধিবেশনটি ছিল এ বছরের প্রথম অধিবেশন। তাই সংসদের প্রথা অনুযায়ী বিগত অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। এ ভাষণের ওপর সরকারি ও বিরোধী দলের ২২৭ জন সংসদ সদস্য ৪১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট আলোচনায় অংশ নেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বিরোধী দলের ১৩ সদস্য এক হাজার ৩০টি সংশোধনী প্রস্তাব দেন, কিন্তু সেগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ বক্তব্য আলোচ্যসূচিতে থাকলেও সেখানে সমসাময়িক ঘটনাবলী ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। আর এমন বিতর্ক এবং আলোচনাই সংসদীয় রীতির প্রধান বাহন। অনির্ধারিত অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সংসদ অধিবেশনে আলোচনায় এসেছে। আইন পাস হয়েছে বেশ কিছু। কিন্তু সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি এখনো সম্পন্ন হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তাঁর শেষ ভাষণে স্পষ্ট বলেছেন, বাজেট অধিবেশনের আগেই সংবিধান সংশোধনের কাজটি সম্পন্ন হতে পারে। একইসঙ্গে তিনি বিরোধী দলকেও আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সংসদকে কার্যকর করেন। যদিও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, কেবল সদস্যপদ বাঁচিয়ে রাখার জন্যই বিরোধী দল সংসদে গিয়েছে। অধিবেশন শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তেও তাঁরা অধিবেসন থেকে ওয়াকআউট করেছেন। ফলে আগামী অধিবেসনে তাঁরা যোগ দেবেন কি না, তা নিয়েও অনেকের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। ওয়াকআউটও একটি সংসদীয় রীতি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বিরোধী দল এভাবেই সংসদে তাদের সরব উপস্থিতি বহাল রাখবে।
অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে স্পিকার সংসদকে কার্যকর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সবার কাছে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই সংসদকে কার্যকর রাখতে হবে। এটা সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব। গণতন্ত্রের প্রধান শর্তই হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। আমাদেরও পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। বিরোধী দলকে মনে রাখতে হবে, জনগণ পাঁচ বছরের জন্য তাঁদেরও সংসদে পাঠিয়েছে, তাদের সুখ-দুঃখের কথা ও দাবি সংসদে তুলে ধরার জন্য। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংসদে তুলে ধরা বিরোধী দলের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তাঁরা কতটুকু পালন করেছেন, এই প্রশ্নটি তাঁরা নিজেরা নিজেদের করে দেখতে পারেন। একই সঙ্গে সরকারি দলকেও আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। অবাঞ্ছিত বিতর্ক তুলে সংসদকে অকার্যকর করা কোনো মতেই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.