কালের পুরাণ-বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক না ফ্রাংকেনস্টাইন? by সোহরাব হাসান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকের মাসের শেষ অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘অপকর্ম করে কেউ ছাত্রলীগের বদনাম করলে কোনোভাবেই তা বরদাশত করা হবে না। প্রয়োজনে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।...ছাত্রদলের ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা এখন ছাত্রলীগে ঢুকে পড়েছে। ছাত্রলীগের অনেকেই এখন দলাদলির জন্য তাদের দলে টানে।’


(প্রথম অলো, ১ সেপ্টেম্বর ২০১০)
প্রধানমন্ত্রী এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি। তিনি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মী এবং তাঁদের সহায়তাকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তালিকা করা হচ্ছে বলেও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন।
আমরা এ ধরনের আশ্বাসবাণী আগেও বহুবার শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ছাত্রলীগকে যত বেশি সতর্ক করে দেন, তত তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ঘরের বখে যাওয়া ছেলেটিকে মা-বাবা যেভাবে সোহাগে-শাসনে-নরমে-গরমে সুপথে আনতে চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগের নেতারা সেভাবেই ছাত্রলীগকে বোঝাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের স্নেহমিশ্রিত শাসন কোনো কাজে আসছে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধানের পদ ত্যাগ করার পরও তাদের সুমতি হয়নি। দৌরাত্ম্য কমেনি।
সরকারের গোড়ার দিকে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘাত-সংঘর্ষের খবর আমরা পেতাম। ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রদল, ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রশিবির। ছাত্রলীগ বনাম বাম ছাত্রসংগঠন। এখন তারা হয় ক্যাম্পাস ছাড়া, না হয় ছাত্রলীগের মাস্তানির কাছে হার মেনেছে। ফলে ছাত্রলীগ নিজেরাই মারামারি, লাঠালাঠি করছে। প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন, তখন ছাত্রলীগ একজন আরেকজনকে চারতলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করছে, হাত ও পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে বীভৎস উল্লাস করছে। এরই নাম কি ডিজিটাল? এরই নাম কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যে কর্মীকে দোতলা থেকে প্রতিপক্ষ ফেলে দিয়েছিল, তিনি মারা গেছেন। জাহাঙ্গীরনগরে যাঁদের ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরাও পঙ্গু হয়ে আছেন। মা-বাবা কি তাঁদের লাশ হয়ে যেতে, পঙ্গুত্ব বরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, শিবির ও ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকে এসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এর আগে সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছিলেন, প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। যে কারণে সরকারের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মন্ত্রীরা বলছেন, আওয়ামী লীগেও নাকি বিএনপি-জামায়াত ঢুকে পড়েছে। তাঁদের এসব অভিযোগ সত্যি হলে সেটি খুবই চিন্তার বিষয়।
সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মন্ত্রীদের মুখে, নেতাদের মুখে শুনে এসেছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই অভয়বাণী শুনে এসেছি। কোনো কাজ হয়নি। এখন আর করব করব বললে হবে না, করে দেখাতে হবে। ছাত্রলীগ নামধারী মাস্তান-সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করে, জেলে পাঠিয়ে, বিচার করে বলতে হবে—এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে কাউকে রিমান্ডেও নেওয়া হচ্ছে। একই পদ্ধতি ছাত্রলীগের বেলায়ও প্রয়োগ করুন। আইন সবার জন্য সমান। দেশবাসী বিশ্বাস করে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, ডান্ডাবাজি, পেরেক ঠোকাঠুকি বন্ধ হয়ে যাবে। ছাত্রলীগে এমন হিম্মত কার আছে তাঁর কথা অমান্য করবে?

২.
অস্বীকার করা যাবে না, গত ২০ মাসেও বিরোধী দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি কোনো কার্যকর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেনি; বরং সরকারের আক্রমণাত্মক কৌশল মোকাবিলা করতেই তাদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। দীর্ঘ মেয়াদে এর ফল ভালো হবে কি মন্দ হবে, জানি না। আপাতত সরকার নিরাপদ। জনজীবনের সমস্যা নিয়ে বিএনপি মাঠে নেই; তারা মাঠে আছে পুরোনো মামলা, নতুন মামলা, রিমান্ড ও জামিন নিয়ে। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি-জামায়াত জোট যে আত্মঘাতী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তার কাফ্ফারা দিতেই সময় চলে যাচ্ছে। কথায় বলে, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। আত্মরক্ষার কৌশল নেওয়া ছাড়া বিএনপির করার কিছু নেই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মন্জুর আলম যে জয়ী হয়েছেন, তার পেছনেও দলীয় নেতা-কর্মীদের তেমন অবদান নেই; বরং সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একগুঁয়েমি এবং হামবড়া ভাবের কারণে জনগণ তাঁর প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটি বরং সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে ঢাকা সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফের জয়ও বিএনপির জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছিল, কিন্তু তারা শোনেনি। আওয়ামী লীগও শুনবে বলে মনে হয় না। রাজনীতিকেরা ক্ষমতার মদে এমনই মত্ত থাকেন যে ওসব হুঁশিয়ারি গায়ে মাখেন না। তাঁরা ভাবেন, রোজ কিয়ামতের আগে কেউ তাঁদের ক্ষমতা থেকে নামাতে পারবে না। দুর্মুখ সাংবাদিকেরা যা-ই বলুন না কেন, জনগণ তাঁদের সঙ্গে আছে।
সহযোগী ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সরকারের দেড় বছরের কার্যক্রম নিয়ে একটি জনমত জরিপ ছেপেছে। ছয় মাস আগেও আরেকটি জরিপ ছাপা হয়েছিল। দুই জরিপের ফলাফলের পার্থক্য বিশ্লেষণ করলেই অনুধাবন করা যাবে, কেন সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে। এর অর্থ এই নয় যে, বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দেশের ইতিহাসে এবারই বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে অকার্যকর ভূমিকা পালন করছে। সংসদের ভেতরে ও বাইরে কোথাও তাদের উপস্থিতি নেই টেলিভিশনের পর্দা ও মুক্তাঙ্গন ছাড়া। টেলিভিশনে মুখ দেখিয়ে কোনো দল মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে না। বিএনপি গত পাঁচ বছরের শাসনামলে যেসব অপকর্ম করেছে, তার দায় জাতিকে আরও বহুদিন ভোগ করতে হবে; এমনকি বিএনপিকেও।
মোটা দাগে আওয়ামী লীগ কতগুলো ভালো কাজ করেছে। তাদের কৃষিনীতি ভালো, শিক্ষানীতি ভালো, প্রস্তাবিত শিল্পনীতি শ্রমিকবান্ধব। অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আছে; কিন্তু যেটি নেই তা হলো দলীয় মাস্তানি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর দৌরাত্ম্য ঠেকানো। সরকারের ভেতর সরকার, নেতার ভেতর নেতা গড়ে উঠেছে। সাংসদের পিস্তলের গুলিতে মানুষ মারা যাচ্ছে। ছাত্রলীগ এখন আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন নেই, হয়ে উঠেছে ফ্রাংকেনস্টাইনের দৈত্য। মেরি শেলির সেই বিখ্যাত কাহিনির মতো, ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করেছিলেন এমন এক প্রাণী, যে আকারে-প্রকারে, শক্তিতে সবাইকে ছাড়িয়েগিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিজের শক্তিতেই নিজে ধ্বংস হয়ে যায় (সাধারণভাবে সেই দৈত্য ফ্রাংকেনস্টাইন নামেই পরিচিত)।
এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার সরকারকে যদি কেউ চ্যালেঞ্জ করে থাকে, সে হলো ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই তাঁদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে প্রচার করুন না কেন, তারা আত্মঘাতী, প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে; যার চাক্ষুষ প্রমাণ আমরা পাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছাত্রলীগের বহু শাখায়। ছাত্রলীগ মানেই এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। অনেকে বলবেন, ছাত্রলীগের সব কর্মী তো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নন। একই যুক্তি তো অন্যরা বিএনপি-জামায়াতের বেলায়ও দিতে পারেন। বিএনপিরও সবাই গ্রেনেড-বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাই বলে কি বিএনপি নেতৃত্ব এর দায় এড়াতে পারে? তাহলে এড়াবে কী করে?
বিএনপির আমলে যেমন ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিল, সরকার বা প্রশাসনকে থোড়াই কেয়ার করত। মাসের পর মাস ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসছাড়া করে রেখেছিল। আবার চাঁদার বিনিময়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা পরীক্ষা দিয়ে যেতেন, ক্লাস করার অনুমতি পেতেন। এখন ছাত্রলীগও একই নীতি অনুসরণ করে চলেছে। অর্থের বিনিময়ে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন, হলে থাকার অনুমতি পাচ্ছেন। রাজশাহী ও বরিশালে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এ-সম্পর্কিত নানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আমরা অফিস-আদালতে এত দিন ঘুষের লেনদেনের কথা শুনেছি। এখন দেখছি, শিক্ষাঙ্গনে সেই ঘুষ ঢুকে পড়েছে।
কোথাও মারামারি হলে, ছাত্রলীগের এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়, কারও কারও সদস্যপদ স্থগিত করা হয়, বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তাতে লাভ কী? জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করার পরও সংঘর্ষ হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও শিবিরকে তাড়ানোর পর এখন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ মারামারি করছে। একজন ছাত্রকে দোতলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নির্বিকার। নিছক কৈফিয়ত তলব, সাময়িক বহিষ্কার করে দায়িত্ব শেষ করছে তারা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কী দেখেছি? কী হচ্ছে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে? ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করেছেন। এর আগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে তাঁরা তাড়িয়েছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা উপাচার্য হন, প্রক্টর হন, তাঁরাও সরকার তোষণে ব্যস্ত। রাজনৈতিক আনুকূল্যে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এর বেশি কী করতে পারেন?
এখন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে ছাত্রলীগের অপরিসীম দৌরাত্ম্য, ক্ষমতা। বিরোধী দলে থাকতে যখন শেখ হাসিনার ওপর বোমা হামলা হয়, তখন তো তাদের রাস্তায় দেখিনি। যখন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন কজন সাহসী মেয়ে-কর্মী ছাড়া কেউ রাজপথে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, এরা সুযোগসন্ধানী। পিপিপি (প্রেজেন্ট পজিশন পার্টি)। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, ভিড়ে যায়। তাদের ঠেকানোর মতো নৈতিক ও আদর্শিক জোর ছাত্রলীগের নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে যেসব অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, তা ভয়াবহ। টাকা খেয়ে, উপঢৌকন পেয়ে কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ে নির্বাচন হবে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তিনি একবার সরাসরি ভোটের ব্যবস্থাও করেছিলেন। ভোটের জায়গাটি ভেট (উপঢৌকন) দখল করে নিলে সেই সংগঠনে নীতি ও আদর্শ বলে কিছু থাকে না।

৩.
মাছের পচন ধরে মস্তিষ্ক থেকে। আর জাতির পচন ধরে শিক্ষাঙ্গন থেকে। মানুষ আশা করে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে। চুয়াত্তরে এ দেশে আমেরিকাসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের আগে শিক্ষাঙ্গনে আদর্শ ও মূল্যবোধের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল। যার পরিণাম মুহসীন হলে সাত হত্যা। ডাকসুর ব্যালট বাক্স ছিনতাই। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে ইংরেজি নববর্ষের (২০০০) অনুষ্ঠানে বাঁধন নামে একটি মেয়েকে লাঞ্ছিত করে কতিপয় তরুণ। তাদের ছবিও সে সময় পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। কিন্তু ১১ বছর পর দেখছি, অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে। অপরাধ হয়েছে অথচ পুলিশ অপরাধী খুঁজে পায়নি। প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে সংঘটিত অপরাধের নায়কেরা পার পেয়ে গেল! দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও নারী। এই ভরসায় আমরা মামলাটি পুনঃ তদন্তের দাবি জানাই।
কয়েক দিন আগে এ ক্যাম্পাসেই একটি গাড়ির ধাক্কায় পালি ও বুড্ডিস্ট অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া রিকশায় যাওয়ার সময় সামান্য আহত হন। এর প্রতিবাদে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন। গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ছাত্রদের মাস্তানির ছবিও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। একজন শিক্ষক আহত হলে ছাত্রদের খারাপ লাগবে, তাঁরা প্রতিকার চাইবেন। ভালো কথা। তাই বলে প্রতিবাদের নামে পাইকারি ভাঙচুর করবেন? এর আগেও দেখেছি, ক্যাম্পাসে কিছু হলেই ছাত্ররা ভাঙচুরে মত্ত হয়। এ কোন ধরনের মানসিকতা? সেদিন ছাত্রদের আক্রোশ থেকে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের নতুন টয়োটা গাড়িটিও রেহাই পায়নি। চালক বারবার বলছিলেন, এটি শিক্ষকের গাড়ি; ছাত্ররা কর্ণপাত করেননি। রেহাই পায়নি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মহব্বত খানের গাড়িও। এ ঘটনা আমাদের কী বার্তা দেয়? শিক্ষার্থীরা যদি শিক্ষকের গাড়ি ভাঙচুর করেন, চালককে মারধর করেন কিংবা অন্যায় আবদার পূরণ করতে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেন, তাহলে তো সেটি আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে না, মাস্তানালয়ে পরিণত হয়।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net

No comments

Powered by Blogger.