যুক্তরাজ্যে হেরোইন পাচার মামলা-বিডি ফুডসের চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

যুক্তরাজ্যে ২১ কেজি হেরোইন পাচারের মামলায় বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিনসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলা হওয়ার ছয় বছর পর গত মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন।


অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন: বিডি ফুডসের কর্মচারী নাজমুল হায়দার ওরফে বুলবুল, ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক, ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, তাঁদের সহযোগী বিমানের কার্গো শ্রমিক মোখলেসুর রহমান নয়ন, আরেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গ্রিন হ্যাভেনের মালিক আবুল বাশার সেলিম, তাঁর সহযোগী কাজী জাফর রেজা ও মিন্টু ওরফে তাজউদ্দিন। তাঁদের মধ্যে সাতজন জামিনে আছেন। আসামি মিন্টু পলাতক।
গত মঙ্গলবার অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও বিষয়টি গোপন রাখতে নানা তৎপরতা চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মতিঝিল থানার মামলাটির অভিযোগপত্রের বিষয়ে জানতে গতকাল এই থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় গেলে কর্মকর্তারা বলেন, মামলার নথি আদালতের নকলখানায় রয়েছে।
কিন্তু নকলখানা (অনুলিপি) শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর শাখায় নথি আসেনি। এ কথা জানানোর পর মতিঝিল থানার (জিআর) শাখা থেকে বলা হয়, নথি হাকিমের কাছে আদেশের জন্য আছে।
অবশ্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত ও তথ্য বিভাগের (প্রসিকিউশন) অতিরিক্ত উপকমিশনার আনিছুর রহমান অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার এই মামলার পলাতক আসামি মিন্টু ওরফে তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম নৌবন্দর দিয়ে শিম, লতাপাতা, কচু ও জালি ভরে ১৭০টি কার্টনে মোট সাত হাজার কেজি সবজির ভেতরে করে যুক্তরাজ্যে ২১ কেজি হেরোইন পাচার করে বিডি ফুডস। চালানটি যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর সে দেশের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনা যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে জানালে সরকার তৎপর হয়।
পরে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি বিডি ফুডসের কর্মী নাজমুল হায়দার, মাঈনুদ্দিন ও বিমানের কার্গো শাখার কর্মী নয়ন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে বিডি ফুডসের চেয়ারম্যানসহ অন্যদের নাম প্রকাশ পায়। তবে আসামি বিডি ফুডসের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা মোমিন পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই তিনজনের দেওয়া জবানবন্দি অসত্য বলে দাবি করেন, যা অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে। এ ছাড়া আটক হেরোইন আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়।
সিআইডির একটি সূত্র জানায়, মামলার আলামত হিসেবে লন্ডনে আটক হেরোইন পরীক্ষাসহ অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় তদন্তকাজ বেশ কয়েকবার আটকে যায়। সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের আইনে এক কেজির বেশি হেরোইন পাচারে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা মেলেনি। কারণ, যুক্তরাজ্যে কোনো অপরাধে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করা হয় না। ২০০৮ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাজ্যের জেনারেল অ্যাটর্নি বিভাগ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এই মামলায় দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তাই যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে আর কোনো সহায়তা মেলেনি।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, লন্ডনের দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে সবজি ও মেঝের টাইলস রপ্তানির আড়ালে হেরোইন পাচার করত বিডি ফুডস। একপর্যায়ে যুক্তরাজ্যে পাঠানো দুটি চালানে ৭৫ কেজি হেরোইন ধরা পড়ার পর সিআইডি বাদী হয়ে ঢাকার মতিঝিল ও সূত্রাপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করে। এর মধ্যে মতিঝিল থানায় দায়ের করা হয় ২১ কেজি হেরোইন পাচারের মামলা।

No comments

Powered by Blogger.