আবার একজন সাংবাদিক খুন-দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

আবার একজন সাংবাদিক খুন হলেন। যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কাগজের প্রতিনিধি ছিলেন জামাল উদ্দিন। শার্শার কাশিপুর বাজারে রাত ১১টার দিকে তিনি একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। সেখানেই সন্ত্রাসীরা আকস্মিকভাবে তাঁকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়।


এরপর হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এতেও সন্ত্রাসীদের আক্রোশ অবদমিত হয়নি। তারা তাঁর একটি চোখ পর্যন্ত তুলে ফেলেছে। কেন সাংবাদিকদের ওপর দুর্বৃত্তদের এমন ক্ষোভ? আর কিভাবে একজন সাংবাদিকের ওপর এরূপ বীভৎস নির্যাতন করে খুন করার মতো সাহস পায়?
সাংবাদিকের ওপর ক্ষোভ থাকতে পারে দুর্নীতিবাজ বা দুর্বৃত্তদের। থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ একজন সাংবাদিক তাঁর দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান হলে সমাজের, প্রশাসনের কুকর্ম বা জনস্বার্থবিরোধী-রাষ্ট্রবিরোধী অপকর্ম তাঁর লেখার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। সব ধরনের কুশ্রিতা, অন্যায়, অত্যাচার ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ করতে পারেন সংবাদপত্রের মাধ্যমে। সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে একজন সাংবাদিক সত্যের কঠিন পথে চলেন, তাঁকে চলতে হয়। সাংবাদিকের চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ হতে পারে; কিন্তু অবরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে না। তাঁর চলার, বলার, স্বাধীনতার অধিকার সাংবিধানিক। এ জন্য এই অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতার কারণে সাংবাদিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই কোথাও- না শহরে-নগরে, না মফস্বলে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ করে আসছি সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটিয়েছে পুলিশ, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মী-ক্যাডাররা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, অনেক সময় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনেই। ফার্মগেট পুলিশ বক্সে ঢুকিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। তখনো পুলিশ বলেছিল, সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না। ঠিক একই উক্তি করেছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা সেদিন প্রথম আলোর তিনজন ফটো সাংবাদিককে আক্রমণ করার মুহূর্তে। কেন এমন দুঃসাহস দেখান পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর এই দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে কিসের ভিত্তিতে, যে জন্য বলতে পারেন 'সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না।' অথচ সাংবাদিক কেন, কোনো মানুষকে পেটানোর অধিকার পুলিশকে দেওয়া হয়নি। পুলিশের হাতে লাঠি, অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে জনগণকে নিরাপদ রাখার জন্য। অথচ তারা এগুলোর অপব্যবহার করে আসছে বরাবরই।
সাগর-রুনিসহ এ পর্যন্ত যত সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে এর কোনোটির বিচার হয়নি। এই যে পুলিশের দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন, খুনের বিচার না হওয়া- সরকারের এসব অবহেলা ও অবিচারের প্রশ্রয় প্রদানের প্রবণতাই দুর্বৃত্তদের পরোক্ষ ইন্ধন জোগায়। যার পরিণতিতে জামাল উদ্দিনের মর্মান্তিক মৃত্যু। প্রশাসনের বোধোদয় হবে এ আশা করি আমরা। দেশবাসী জামাল উদ্দিনের খুনির বিচার দেখতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.