যত দ্রুত সম্ভব তফসিল ঘোষণা করা হোক-ডিসিসি নির্বাচন

মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরই ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু গত ২০ মাসেও নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় নগরবাসী হতাশ। যেকোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে মেয়াদ শেষে নির্বাচনের বিকল্প নেই।


তিন বছর আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন না হওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মেয়াদোত্তীর্ণ অন্যান্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হলেও ডিসিসির নির্বাচন করা হয়নি রাজনৈতিক বিরোধিতার আশঙ্কায়। সেটি ছিল অনির্বাচিত সরকারের আমল। এখন নির্বাচিত সরকার দেশ চালাচ্ছে। তাহলে নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি কেন?
এর আগে নির্বাচন কমিশন থেকে আভাস দেওয়া হয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে ডিসিসি এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বৈঠকের পর জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরে ডিসিসির নির্বাচন সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়? এ সময়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই হজ পালন করতে গেছেন। তাঁদের ফিরতে ডিসেম্বর চলে যাবে। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। ঢাকায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিসংকট প্রকট হওয়ায় সরকার এ মুহূর্তে ডিসিসির নির্বাচন করতে চাইছে না বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, আগামী মার্চ মাসে বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির উন্নতি হবে। যে কারণে তাঁরা মার্চ-এপ্রিলে নির্বাচন করার পক্ষপাতী। কোনো প্রার্থী বা দলের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে না। এমনকি নির্বাচন কমিশনও খেয়াল-খুশিমতো তফসিল ঘোষণা করতে পারে না। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সব স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন হতে হবে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া কোনো সংস্থার নির্বাচন পেছানো যাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, ডিসিসির নির্বাচন কখনই ঠিক সময়ে হয়নি। বর্তমান মেয়রের মতো সাবেক মেয়রও আট বছর এই পদে বহাল ছিলেন। এতে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরবাসী।
ডিসিসির নির্বাচন নিয়ে যখন গড়িমসি চলছে, তখন নগরের বাসিন্দারা সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন। অলিগলি তো বটেই, নগরের বড় সড়কগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। অনেক সড়কে বাতি জ্বলে না, মশার উপদ্রবে জনজীবন অতিষ্ঠ। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও এক সমাবেশে ঢাকা মহানগরের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার জন্য মেয়রকে দায়ী করেছিলেন। তিনি নগরবাসীর সমস্যা সমাধানের চেয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এক কোটিরও বেশি জনসংখ্যার একটি মহানগর এভাবে চলতে পারে না। ওয়ার্ডের সীমানা নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল, আদালত তাও নিষ্পত্তি করেছেন। আদালত বলেছেন, পুরোনো সীমানায়ও নির্বাচন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যত দ্রুত সম্ভব ডিসিসির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে—এটাই নগরবাসীর প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.