সব বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান নিশ্চিত করুন-শিশুদের ভর্তি-সমস্যা

সারা দেশে মানসম্মত বিদ্যালয়ের সংখা সীমিত থাকায় প্রতিবছর শিশুদের ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। সব অভিভাবকই চান তাঁর সন্তান সেরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। এ জন্য ভর্তির আগেই শিশুদের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়।


অনেক সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে নামকরা বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির জন্য শিশুদের সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে কোচিং করানো, ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তাদের বাড়িতে বাড়িতে ধরনা দেওয়ার পাশাপাশি উৎকোচ লেনদেনের মতো অনৈতিক কাজের দৃষ্টান্তও কম নয়। পরীক্ষা যত ভালোই হোক না কেন, আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে সবাই ভর্তির সুযোগ পায় না। এ জন্য অনেক সময় অভিভাবকেরা শিশুকে গালমন্দ করে থাকেন, যা তাদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। অনেকে ভালো বিদ্যালয়ে শিশুকে ভর্তি করানোটা সামাজিক মর্যাদারও বিষয় মনে করেন। এটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছাড়া কিছু নয়।
ভিকারুননিসা নূন বিদ্যালয় আগামী বছর থেকে লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগেই অবশ্য হলিক্রস, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি, ওয়াইডব্লিউসিএ এসওএস হারমেন মেইনারসহ কয়েকটি নামকরা বিদ্যালয় লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির নিয়ম চালু করেছিল। ভিকারুননিসা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কেননা এর আগে বিদ্যালয়টির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে বহু কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। একই সঙ্গে লটারির প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।
সত্য যে, লটারির মাধ্যমে মেধা বা যোগ্যতা বাছাই করা যায় না। কিন্তু এর বিকল্পই বা কী আছে? যে শিশু বিদ্যালয়েই যায়নি, তাকে পরীক্ষার মুখোমুখি করা অনৈতিক। এটা তার ওপর মানসিক নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। এর উত্তম বিকল্প হতে পারে, সব বিদ্যালয়ে মানসম্মত পড়াশোনা নিশ্চিত করা। যত দিন সেটি না হয় লটারির মাধ্যমেই প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে অনেক বিপত্তি ও বিতর্ক এড়ানো যাবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মান নিশ্চিত করা গেলে গুটিকয়েক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উন্মুখ থাকতে হবে না।

No comments

Powered by Blogger.