সেনা মোতায়েন অস্থায়ী সমাধান, স্থায়ী সমাধান কাম্য-চট্টগ্রাম বন্দরে ধর্মঘট ব্যাধি

ধর্মঘটরত শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ, তাই সেনা মোতায়েন করে চট্টগ্রাম বন্দর চালুর পদক্ষেপ নিয়েছেন নৌমন্ত্রী। গত রোববার রাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৬ জেটির ১২টিতেই শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। সেনা ডেকে, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়তো সাময়িক সমাধান হবে।


কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিবাদের স্থায়ী মীমাংসা না হলে বন্দর অচলের ব্যাধি ফিরে ফিরেই আসবে। ইতিমধ্যে সেখানে জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘটনায় লাঠিপেটা ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান শ্রমিকদের দায়িত্বশীল আচরণ এবং বন্দর প্রশাসনের আন্তরিকতা ছাড়া হওয়ার নয়।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতির অন্যতম জীবননালি। এই নালির মাধ্যমে অর্থনীতিতে যেভাবে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার কথা, শ্রমিক ধর্মঘটে ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় প্রায়শই তা থমকে যাচ্ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দরের পরিচালনা পদ্ধতির সংস্কার থেকেই বর্তমান সমস্যার জন্ম। নতুন নিয়ম অনুযায়ী দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পাওয়া বেসরকারি বার্থ অপারেটরদের শ্রমিক নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়ার ব্যবস্থা বন্দরশ্রমিকেরা মানছেন না। এ ছাড়া আগের ওই সংস্কারের সময় শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার ও সুবিধাও কাটছাঁট করা হয়েছে বলেতাঁদের অভিযোগ। নতুন নিয়মের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো তাঁরা ফিরে পেতে চান। তাঁদের দাবি, বন্দরের আগের নিয়ম অনুযায়ীই পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা শ্রমিক পরিচয়পত্রও রয়েছে তাঁদের চাহিদার তালিকায়।
দাবিগুলো মীমাংসার অযোগ্য নয় এবং আলোচনার মাধ্যমেই তা হতে পারত। তাহলে বন্দর অচল করায় ধর্মঘট ডাকা এবং তা সচল করায় সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন পড়ত না। ন্যায্য দাবি জানানোর অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই বৃহত্তর স্বার্থের ক্ষতি করে নয়। এ ছাড়া তুচ্ছ কারণে আন্দোলনে ‘ধর্মঘট কৌশল’-এর অতিব্যবহার ও অপব্যবহারও এর কার্যকারিতাকে কমিয়ে দিয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা খুবই স্পর্শকাতর। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্রকে হঠাৎ করে অচল করে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একইভাবে গ্রহণীয় নয় বেসরকারি বার্থ অপারেটরদের একগুঁয়েমি। অভিযোগ রয়েছে, এই কর্মবিরতির সঙ্গে চট্টগ্রামের রাজনীতির প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। একদিকে শ্রমিকদের বিভক্ত করে দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহার, অন্যদিকে কায়েমি গোষ্ঠীর কোটারি স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে থাকছে বন্দরের গতিশীলতা। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দেশের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে; আর নয়।
দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯০ শতাংশ চলে যে বন্দরের মাধ্যমে, চরম প্রয়োজনে ছাড়া সেখানে ধর্মঘট গ্রহণযোগ্য নয়। শ্রমিকদের এই বাস্তবতা বুঝতে ও মানতে হবে। প্রয়োজনে শ্রমিকদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। কর্তৃপক্ষেরও বোঝা উচিত, শ্রমিকবান্ধব নীতির মাধ্যমেই শ্রমিকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
জরুরিভাবে বন্দর চালু করায় গৃহীত কঠোর পদক্ষেপগুলো অস্থায়ী হোক এবং স্থায়ীভাবে শ্রমিক-অসন্তোষ দূর করায় বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হোক, এটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.