শিক্ষা ক্ষেত্রের নৈরাজ্য দূর করুন

অনুমোদনবিহীন একটি প্রতিষ্ঠান কয়েক লাখ টাকায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এমবিএ, এমফিল, এমনকি পিএইচডির সার্টিফিকেট বিক্রি করছে ১০ বছর ধরে। তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আদালতে মামলা করলে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের


বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কয়েক শ প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বিদেশে ভর্তি, এমনকি বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়মিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনের ভাষাও বেশ চমকপ্রদ_'সাত দিনে ভিসার গ্যারান্টি', 'আগে ভিসা পরে টাকা', 'খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ' ইত্যাদি। এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে এবং লাখ লাখ টাকা খুইয়ে সারা দেশে শত শত পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। অথচ সরকার নির্বিকার।
বর্তমান সরকারের সাফল্যের খতিয়ানে শিক্ষা খাত সবচেয়ে এগিয়ে। কিন্তু তার পরও এখানে যে নৈরাজ্যকর অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তা রীতিমতো দুঃখজনক। দীর্ঘদিনে এত বেশি জঞ্জাল এই খাতটিতে জড়ো হয়েছে যে, এগুলো থেকে কবে উদ্ধার পাওয়া যাবে কিংবা আদৌ উদ্ধার পাওয়া যাবে কি না, তা বলা কঠিন। কেবল গত বৃহস্পতিবারই কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, ভুয়া সনদপত্র এবং ভুয়া নাম-পরিচয় নিয়ে এক প্রতারক দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক ও গবেষক হিসেবে কাজ করে আসছে। সাত বছর ধরে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভার ভাগলপুর আফতাব উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই ব্যক্তি। শহীদুল আলম, পিতা-আব্বাস আলী লস্কর নাম নিয়ে যে ঠিকানা ব্যবহার করেছে, সেই ঠিকানায় এ রকম কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে তার নাম মঞ্জুরুল হক, বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামে। বাবার নাম আবদুল আজিজ প্রামাণিক। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে এসব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কী শিখবে?
শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। দীর্ঘদিনে শিক্ষা খাতে দুর্নীতি যেভাবে ডালপালা বিস্তার করেছে, তা জাতির মেরুদণ্ড প্রায় ভেঙে দিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, একটি অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান ১০ বছর ধরে পিএইচডির সার্টিফিকেট বিক্রি করে চলেছে কিভাবে, যেখানে স্বীকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষমতা নেই? তা ছাড়া প্রতিদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে শত শত শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করা হলেও সরকার নীরব কেন? তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? এরা সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে। তারপর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও যেখানে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে, সেখানে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশে পাঠাতে কোনো নীতিমালা থাকবে না কেন? আর সিটি করপোরেশনই বা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে কিসের ভিত্তিতে?
সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। পত্রিকাগুলোও যেন প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে নীতিমালা থাকতে হবে। যেসব পরিবার প্রতারকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। কারণ, সরকার এ ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থরক্ষায় শুধু ব্যর্থই নয়, চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.