এবার কৌশলে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ! by অরুণ কর্মকার

সরকার কৌশলে নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ আপাতত বন্ধ রাখার নীতি নিয়েছে। যেসব গ্রাহক নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন এবং করবেন, তাঁদের চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট) বরাদ্দে এখন থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেওয়া হবে।


বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তবে সংযোগ না দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হবে না। কৌশল হিসেবে সংযোগ-প্রক্রিয়ায় বেশি সময় নেওয়ার ব্যাপারে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নতুন সংযোগের জন্য যে আবেদনটি একজন ব্যবস্থাপক অনুমোদন করতেন, এখন সেটা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে পাঠানো যেতে পারে। এতে প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় অনেক বেশি লাগবে।
জানা গেছে, গতকাল রোববার কোনো কোনো বিতরণ কোম্পানি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে বিষয়টি যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে জানাজানি না হয়, সে জন্য লিখিত কোনো অফিস আদেশ জারি করা হয়নি। মন্ত্রণালয় যেমন মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে, তেমনি কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারাও মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরজত হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সংযোগের জন্য আবেদপত্র নেওয়া অব্যাহত থাকবে। এসব আবেদনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তটি কোম্পানির কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা নিষ্পত্তি করবেন, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা দেবে। ভবিষ্যতে সে অনুযায়ী কাজ হবে।
তবে বিষয়টি যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক, আসলে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলার কৌশল হিসেবে সরকার নতুন সংযোগ দেওয়া আপাতত বন্ধ রাখতে চাইছে। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে ইতিমধ্যে সারা দেশে ২৪ লাখের বেশি নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর কাছাকাছি কোনোভাবেই যাওয়া যাচ্ছে না।
পেছন ফিরে দেখা: বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ-ঘাটতি নিয়ে। এরপর ঘাটতি মোকাবিলায় আশু করণীয় হিসেবে ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক এবং মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস ও দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করে।
এর একপর্যায়ে ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে সরকার তিন মাসের জন্য নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এরপর তা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। তারপর তা আরও এক মাস বাড়িয়ে ৩০ অক্টোবর করা হয়। এরপর নতুন সংযোগের নীতিমালা তৈরির জন্য আরও এক সপ্তাহ সময় নেওয়ার পর, ওই বছরের ৭ নভেম্বর থেকে শর্তসাপেক্ষে কিছু সংখ্যক (যাঁদের নামে চাহিদাপত্র বরাদ্দ করা ছিল তার অর্ধেক) গ্রাহকের জন্য নতুন সংযোগ চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
সীমিত সংখ্যক গ্রাহককে নতুন সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তখন প্রথম চালু করা হয় সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের (দুই কিলোওয়াটের বেশি চাহিদার ক্ষেত্রে) নিয়ম। পাশাপাশি তখন নতুন করে চাহিদাপত্র বরাদ্দ করা বন্ধ রাখা হয়। বলা হয়, প্রথম অর্ধেক গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার পর বাকি অর্ধেককে একই শর্তে পর্যায়ক্রমে সংযোগ দেওয়া হবে।
এই প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১১ সালের ১৫ মে থেকে আবার একশ্রেণীর গ্রাহককে নতুন সংযোগ দেওয়া শুরু করা হয়। এ পর্যায়ে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের শর্ত বহাল রেখে ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত চাহিদার সব শ্রেণীর গ্রাহককে (যাঁদের অনুকূলে ওই বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাহিদাপত্র বরাদ্দ করা ছিল) নতুন সংযোগ দেওয়া শুরু করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে কোনো গ্রাহক নিঃশর্ত নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ পাননি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান পর্যায়ে কৌশলে নতুন সংযোগ বন্ধ রাখার আরেকটি পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

No comments

Powered by Blogger.